সাগর বক্ষ থেকে পরিশোধিত তেল পরিবহনের পর এবার সফলভাবে অশোধিত জ্বালানি তেলও সঞ্চালন করেছে মহেশখালীতে স্থাপিত সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বা এসপিএম। একে জ্বালানি খাতের ‘যুগান্তকারী সংযোজন’ বলছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার মহেশখালীর কালারমার ছড়ায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংক থেকে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদীর তীরে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে এসে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “টেস্টিং কমিশনিংয়ের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল আসল। গত ৯ মার্চ থেকে আজ ১৫ মার্চ অবধি ৪০ হাজার টন এসেছে। এর মাধ্যমে আমাদের টেস্টিং কমিশনিং সফলভাবে শেষ হল। আগে পরিশোধিত ডিজেল এসেছিল। এর মানে হচ্ছে দুটো পাইপলাইন দিয়ে ডিজেল ও অপরিশোধিত তেলের কমিশনিং শেষ হল।”
এখন থেকে মাদার ভেসেলগুলোকে টাগবোটের মাধ্যমে এসপিএমে নিয়ে যেতে পারলে আর জেটি ব্যবহার করে তেল খালাস করতে হবে না। বাংলার সৌরভ লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে এতদিন অশোধিত তেল আনলোড করা হত। এগুলোও আর লাগবে না।
বড় বড় জাহাজগুলো মহেশখালী এসপিএমের নিয়ে আসতে টাগ বোট লাগে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই ধরনের টাগবোট আছে। তবে সেগুলো ব্যবহার হবে নাকি নতুন নেতা হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
বাংলাদেশে এখন বছরে ১৫ লাখ টনের মত তেল আমদানি করতে হয়। এই তেল লোড আনলোডে ৮০০ কোটি টাকা থেকে এক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। নতুন ব্যবস্থায় এই অর্থ সাশ্রয় হবে।
অশোধিত তেল নিয়ে আসার ঘটনাটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেইসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে শেয়ার করা বার্তায় একে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ‘যুগান্তকারী সংযোজন’ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
এসপিএম এর মাধ্যমে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে বলেও উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।
গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে পরিশোধিত তেল নেওয়া হয়েছিল।
ওই বছরের ২৬ জুন মহেশখালীর অদূরে গভীর সাগরে স্থাপিত এসপিএম ব্যবহার করে পাইপলাইনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে তেল খালাসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল। তবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তা পিছিয়ে যায়।
পরে ৩ জুলাই ‘এমটি হোরে’ নামের জাহাজ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীর কালারমার ছড়ায় স্থাপিত ট্যাংকে তেল পরিবহনের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হয়। পাঁচ দিনের মাথায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে পাইপলাইনে সরাসরি তেল পরিবহন কার্যক্রম পিছিয়ে যায়।
ত্রুটি সারানোর পর বিশেষায়িত বয়া ব্যবহার করে গত ৩ ডিসেম্বর জাহাজ থেকে ৮৩ হাজার টন ক্রুড অয়েল এবং ৭ ডিসেম্বর ৬০ হাজার টন ডিজেল পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে নেওয়া হয়।
ইস্টার্ন রিফাইনারির এমডি লোকমান বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে কমিশনিংয়ের সময় কিছু সমস্যা ছিল। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। তা আমরা কাটিয়ে উঠেছি।”
পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাসের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি।
মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল খালাস করা হবে।
১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইনে তেল প্রথমে নিয়ে আসা হবে কালারমার ছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাংক ফার্মে। সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাচ্ছে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূল হয়ে ইআরএলে।