উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন (খসড়া)’ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। খসড়াটি গত ৫ মার্চ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি দমনের পাশাপাশি ব্যবসা-শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যানবাহনে নারীদের হয়রানি প্রতিরোধের বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ বছর আগে হাইকোর্ট থেকে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে ওই নির্দেশনায় হাইকোর্ট উপযুক্ত আইন প্রণয়নের আগে পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দেয়।
হাইকোর্টের নির্দেশনার পর যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন প্রণয়নে সোচ্চার হয়ে ওঠে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতিসহ নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা অন্যান্য সংগঠন। এসব সংগঠন আলাদাভাবে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে জমা দেয়। এরপর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সভা শেষে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খসড়াটি আমরা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, সেখানে আমরা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া দ্রুত করার সুপারিশ করেছি।’ তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি যেন দ্রুত এটি আইনে পরিণত করতে কাজ করেন তারা। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর সঙ্গে মানবাধিকার কমিশন একাধিক সভা করেছে বলে জানান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
খসড়া আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশে প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি করার কথা রয়েছে, দেখা গেছে অনেক জায়গায় কমিটি নেই, থাকলেও কোনো কার্যকর না। যে কারণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা বারবার ঘটছিল। এ খসড়া আইনে কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য কর্মস্থল ও যানবাহনে হয়রানির বিষয়গুলো যুক্ত করেছি। আমি মনে করি এ আইনটি দ্রুত হওয়া উচিত।
হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে কমিটি করা হয়নি এবং বহু প্রতিষ্ঠানে তা অকার্যকর বলে মনে করেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘কমিটিগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। বিশেষ করে বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে এর কোনো কার্যকারিতা নেই। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও কমিটি করা হয় না।’
আইনজীবী সালমা আলী বলেন, সংবিধানের ১০১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের নীতিমালাটি একটি আইনের মতো কাজ করবে। যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো ফৌজদারি আইন ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনে বিচার প্রক্রিয়া চলে। নতুন আইনের জন্য খসড়াটি মানবাধিকার কমিশন থেকে সমন্বয়নের কাজ করা হচ্ছে। এ আইনটি দ্রুত পাস হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয়নের দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অবৈতনিক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনে এমন বিষয়গুলো দেওয়ার চেষ্টা করেছি যাতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ কেউ মনে করতে না পারেন যে তিনি সমাজ থেকে বিচ্যুত। এখন বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে আবার এ বিষয়ে কথা বলতে মন্ত্রণালয়ে যাব। মন্ত্রণালয় যদি এ বিষয়ে কোনো ফিডব্যাক দেয় তা হলে তাড়াতাড়ি তা সম্পন্ন করে ফের জমা দেওয়ার চেষ্টা করব।’