বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজসমূহ বাস্তবায়ন করছে।’ এ সময় তিনি বিভ্রান্তকরণ তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে চলমান উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে নগরবাসী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (০৯ মে) বেলা ১২টায় নগর ভবনের সিটি হল সভাকক্ষে নগরীর চলমান উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিতকরণের লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাসিক মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পবিবারের শহীদ সদস্যগণ, জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মারণ করেন রাসিক মেয়র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা‘র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন রেল ক্রসিং এ ফ্লাইওভার নির্মাণ। ফ্লাইওভারসহ নগরীতে যখন নাগরিকগণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে, ঠিক সেই সময়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আলোচিত বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ব্যাখাসহ নগরীর চলমান উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিম্নে তুলে ধরা হলো। রাজশাহী মহানগরীর কেন্দ্রস্থলের বুক চিরে রেললাইন। রেলের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী শীঘ্রই ট্রেন চলাচলের জন্য রেলের ডাবল লাইন হতে যাচ্ছে।
চালু হতে যাচ্ছে ডাবল ডেকার ট্রেন। কোর্ট স্টেশন সংলগ্ন নির্মিতব্য ইয়ার্ডে ভারত ও নেপাল থেকে আনিত পণ্য সামগ্রী নামানো ও ওঠানো হবে। আরডিএ এর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি এলাকা উত্তর দিকে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উত্তর-দক্ষিণে চলাচল বাড়বে। রাজশাহী সিটির আয়তন তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। শহরের মধ্যে রেলক্রসিংগুলোতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। আগামীতে মানুষ ও যানবাহন সংখ্যাধিক্যের কারণে শহরের উত্তর-দক্ষিণে চলাচল ক্রমবৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে যানজটসহ দুর্ঘটনাও বাড়বে।সার্বিক দিক বিবেচনায় জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্ঘটনারোধ ও নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত এবং ভবিষ্যতে উদ্ভূত যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ৫০/১০০ বছরের বাস্তবতায় রাজশাহী মহানগরীতে রেলক্রসিং-এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান মুহুর্তে ফ্লাইওভার তৈরি করা না হলে ভবিষ্যতে তা করা কঠিন হবে, নির্মাণ ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। আপাত দৃষ্টিতে ফ্লাইওভারের ব্যবহার সীমিত মনে হলেও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। প্রসঙ্গত, ১৯৬৬/৬৮ সালে গ্রেটার রোড নির্মাণকালে উক্ত সড়কের নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে কথা উঠেছিল। বিগত ২০/৩০ বছর থেকে আমরা দেখছি, গ্রেটার রোড নির্মাণ কতটা প্রয়োজনীয় ছিল।
উল্লেখ্য যে, ফ্লাইওভারের কাঠামো দাঁড় হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে। ফ্লাইওভারের নিচের অংশের কাজ শেষ হলে উপরের অংশের কাজ শুরু হবে, তখন নিচ দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন সড়কে এক থেকে দেড় বছর যানবাহন চলাচলে সাময়িক অসুবিধা হবে। এই সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা নগরবাসীর প্রতি দুঃখ প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য, সারাদেশের অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোর সমস্যা সমাধানকল্পে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে গত ০৯ মে ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ভবিষ্যতে রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে রেলক্রসিং এলাকায় আন্ডারপাস/ওভারপাস নির্মাণ করবে।’ এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে ১২ জুন ২০২২ তারিখে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সবুজায়ন ও বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নগরীর প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ চারলেন থেকে ছয়লেনে উন্নীত করা হয়েছে। প্রশস্ত সড়ক নেটওয়ার্ক, দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ও আলোকায়নে নগরীর নান্দনিকতা ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে সড়কে কিছু গাছ কাটা পড়েছে। এক্ষেত্রে একটি গাছ কাটা পড়লে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক তার পরিবর্তে পরিকল্পনামতো ১০টির অধিক গাছ রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে।
গত ৫ বছরে দুই লক্ষ ৫০ হাজার এর অধিক স্থায়ী বড় গাছ, সড়কের আইল্যান্ড ও বিভিন্ন মোড়ে হেজ জাতীয় ১০ লক্ষাধিক গাছ এবং বিভিন্ন মৌসুমে ৭ লক্ষাধিক বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। পরিবেশ শাখার কর্মীরা রোপণকৃত গাছের নিবিড় পরিচর্যা করেন, পানির ট্যাংকার মাধ্যমে নিয়মিত পানি প্রদান করা হয়। আমাদের সম্মিলিত অব্যাহত আন্তরিক প্রচেষ্টায় নগরীর সবুজায়ন আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য, ২০০৯, ২০১২, ২০২১ সালেও বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার এবং ২০১২ ও ২০২১ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক লাভ করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরোপণসহ বহুমুখী উদ্যোগের কারণে ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকারণ ধূলিকণা হ্রাসে বিশ্বের সেরা শহর নির্বাচিত হয় রাজশাহী। জনস্বার্থে পুকুর ভরাট রোধকল্পে বিভিন্ন পুকুরের সংস্কারের মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ১৬টি জলাশয়ের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে করে সংস্কারের পাশাপাশি পুকুরগুলো বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
রাসিক মেয়র বলেন, জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিজস্ব অর্থায়নে মুসরইল মৌজায় ১৫ বিঘা ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে জনস্বার্থে কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের প্রস্তাব ১০/০৪/২০২২ তারিখে সিটি কর্পোরেশনের ১১তম সাধারণ সভায় অনুমোদিত হয়। ০৭/০৯/২০২২ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন,২০০৯ ধারা ৮০ উপ-ধারা ২ (ঘ) অনুযায়ী ভূমি ক্রয় করতে পারে সিটি কর্পোরেশন। আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বিষয়ে যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচার চালানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সিটি মেয়র বলেন, প্রায় ১০ লক্ষ জনগোষ্ঠীর রাজশাহী মহানগরী দেশীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে সবুজ, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশসম্মত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। বিগত ৫ বছরে নগরীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। প্রধান প্রধান সড়ক চার থেকে ছয় লেনে উন্নীত করা হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী। গরীর সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজশাহী মহানগরীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের নগরীর প্রশংসা করেন, শহরকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা ও কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলের নিরলস প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। কীর্তিমান ব্যক্তি যাঁরা আমাকে চিন্তা-চেতনা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন, তাঁদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
নগরীর উন্নয়নের কার্যক্রম তুলে ধরে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন জানান, ২৯৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামোর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ২২৯ টি প্যাকেজের ২০৫০ কোটি ৩ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে ১৯৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। সর্বমোট ২২৯টি প্যাকেজের মধ্যে ১৮৩টি প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৪৬টি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশের অধিক। সম্মানিত নাগরিকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে রাস্তা পারাপার ও দুর্ঘটনা রোধে নগরীর ১০টি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৬টি নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে, যা শীঘ্রই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ২৩৮.৭৫কি.মি. কার্পেটিং সড়ক, ২৬০.৩০কি.মি. সিমেন্ট-কংক্রিট সড়ক, ৩৫০.০৫কি.মি. নর্দমা, ৪০.২২কি.মি. ফুটপাথ ও ২৪০৯৯.৫০মি. সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।
১৬টি জলাশয়ের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২৯টি ঈদগাহ, ৫২টি গোরস্থান ও ১টি শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শালবাগান কাঁচাবাজার, নওদাপাড়া কাঁচাবাজার ও ৬ নং ওয়ার্ড কার্যালয় নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও ভুবন মোহনপার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান। হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্প’ কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ৪তলা মাজার কমপ্লেক্স-এর প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ৪ তলা মিনারসহ মসজিদ,মাজার, সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশ গেইট নির্মাণসহ ল্যান্ড স্কেপিং করা হবে। জাতীয় চার নেতার অন্যতম নেতা শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এঁর সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্পটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে। দীর্ঘ মেয়াদে রাজশাহী এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে। দেশের মানুষ শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এঁর জীবনাদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে। লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপনস এ্যান্ড রিকভারি শীর্ষক প্রকল্প এর আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলমান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইপিআই কার্যক্রমে জাতীয়ভাবে পর পর ১০ বার ১ম স্থান এবং জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে জাতীয়ভাবে পরপর ২ বার প্রথম হয়েছে রাসিক। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে রাসিক এমপ্লয়মেন্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটে চারটি কোর্সে প্রথম ব্যাচে ২৪০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতি ব্যাচে ২৪০ জন প্রশিক্ষণার্থী দক্ষ ফ্রিল্যান্সারসহ কর্মমুখী হবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নার্স সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের কর্মসৃজনের লক্ষ্যে শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা, ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ। সেই পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্মার্ট রাজশাহীর ধারণাপত্র তৈরী করা হয়েছে। এতে মোট ১৬২টি ইনিশিয়েটিভ রয়েছে, যা আগামীতে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন রাসিক মেয়র। তিনি জানান, ৫ বছর স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি। নদী ও বরেন্দ্র অঞ্চলভিত্তিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। সিটি কর্পোরেশন এলাকা সম্প্রসারণ। রাজশাহী মহানগরীর প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়) শুরু করা। মহানগরীর কুমারপাড়া গুলগোফুর পেট্রোল পাম্প হতে সাহেব বাজার বড় মসজিদ, বড়কুঠি, পাঠানপাড়া, শিমুলতলা ক্লাব হয়ে ফায়ারব্রিগেড মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর চকপাড়া এলাকায় স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর ওয়ার্ড পর্যায়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সড়কবাতিতে আলোকায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। রিজিলিয়েন্ট আরবান এ্যান্ড টেরিটরিয়্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। আন্তর্জাতিক নৌবন্দর স্থাপন। রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন ও বাস চলাচল চালু করা।
বঙ্গবন্ধু রিভারসিটি‘র কার্যক্রম শুরু করা। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ১৫০ শয্যা রাজশাহী সিটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর সম্প্রসারিত এলাকায় সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মনিবাস নির্মাণ কাজ প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীতে শেখ রাসেল সায়েন্স সিটি ও সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর ফ্লাইওভার/ওভারপাস/ আন্ডার পাস নির্মাণ প্রকল্প।
রাসিক মেয়র বলেন, একান্ত নাগরিক স্বার্থে ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশীজনদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শকে অধিকতর প্রাধান্য দেয় রাসিক। পরিকল্পিত নগরায়ন, রাস্তা, ড্রেনসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নৌপথে বাণিজ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রবাহ বৃদ্ধি, আধুনিক, উন্নত ও স্মার্ট রাজশাহী বিনির্মাণে নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। নগরবাসীর প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আসুন অসত্য প্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জনকল্যাণ ও রাজশাহী মহানগরীর উন্নয়নের স্বার্থে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করি। ইতিবাচক কার্যক্রম লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরে নগরীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও সুনাম বৃদ্ধি করতে গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেন রাসিক মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ জিয়াউল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, প্যানেল মেয়র-১ ও ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযীম, প্যানেল মেয়র-২ ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহম্মেদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, ড. তসিকুল ইসলাম রাজা, কবি আরিফুল হক কুমার, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান,রাবির গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সাজ্জাদ বকুল, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেন, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুজ্জামান, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানে আলম খান, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল জামান, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্বাস আলী সরদার ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহাতাব হোসেন চৌধুরী, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান কোয়েল, ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান, ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান (বাচ্চু), ২৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহের হোসেন, ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলাউদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ নূর-ঈ সাঈদ, বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খান, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন। সঞ্চালনা করেন রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু।