০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৯:৫৫ অপরাহ্ন
শেয়ারবাজারে কোম্পানি দখল পর্ষদ ভেঙে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৫-২০২৪
শেয়ারবাজারে কোম্পানি দখল পর্ষদ ভেঙে

শেয়ারবাজার। নিত্যনতুন প্রতারণার দ্বার খুলছে। অভিনব পদ্ধতিতে দুর্বল কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দখল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক প্রতিষ্ঠান।


এ কাজে সহায়তা করছে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার দায়িত্বে থাকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটির সহায়তায় জাপানি বিনিয়োগের আড়ালে ‘মিনোরি বাংলাদেশ’ নামের একটি কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল দখল করেছে।


তিন বছরে এভাবে ২৬টি কোম্পানির মালিকানা বদল হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না-এ অজুহাতে এমারেল্ড অয়েলের পর্ষদ ভেঙে মিনোরি বাংলাদেশকে প্রথমে মালিকানা দেওয়া হয়। পরে নতুন শেয়ার (প্লেসমেন্ট শেয়ার) ইস্যুর ক্ষমতা দেয় বিএসইসি।


এ নতুন শেয়ারের ক্ষেত্রে যে শর্ত দেওয়া হয়, এর বেশির ভাগই কাগজে সীমাবদ্ধ। শেয়ারের বিপরীতে বাস্তবে কোম্পানির অ্যাকাউন্টে টাকা আসার তথ্য মেলেনি।


শুরুতে নীরবেই এমারেল্ডের ১০ টাকার শেয়ার ৮ টাকারও কমে নেয় মিনোরি। এরপর ভুয়া মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছড়িয়ে শেয়ারের দাম ১৮০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।


পরবর্তী সময়ে আইন, বিধি ও নিয়মের তোয়াক্কা না করে লকইন তুলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আর অজ্ঞাত কারণে শুরু থেকেই নানাভাবে পূর্ণ সহায়তা দিয়েছে বিএসইসি। কোনো ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন, শর্তহীন সুবিধা, আবার ক্ষেত্রবিশেষে নীরব থেকেছে কমিশন।


স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো সুপারিশ, তদন্ত রিপোর্ট এবং পরিদর্শন রিপোর্টও আমলে নেওয়া হয়নি। এছাড়াও যারা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে, তাদেরকে বিভিন্নভাবে চাপে রাখা হয়েছে। শেয়ারবাজারে এ ঘটনা নজিরবিহীন।


জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কোনো কারসাজি হলে বিএসইসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার ঘোষণা দিয়ে অথবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার শর্ত অনুসারে বিনিয়োগ না করলে তা প্রতারণা। বিষয়টি তদন্ত করে কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে না।


তবে বিএসইসির সহায়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ধরনের কিছু ঘটে থাকলে তা নজিরবিহীন। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে চান না তিনি।


তিন বছরে শেয়ারবাজারে ২৬টি কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। এসব কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দেওয়া কিংবা দখলের পদ্ধতি প্রায় কাছাকাছি। এ প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করেছে যুগান্তর। উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।


বাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি দুর্বল মৌল ভিত্তির, মূলধন বিবেচনায় ছোট, শেয়ারের দাম তলানিতে এবং মালিকপক্ষ তুলনামূলকভাবে দুর্বল, দখলের জন্য সেসব কোম্পানি টার্গেট করা হয়। এরপর নামে-বেনামে বাজার থেকে খুবই কম দামে ওই কোম্পানির বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়।


গুজব ছড়ানো হয়-বিদেশিরা কিনে নিচ্ছে, এই কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক দূর যাবে। আর দাম বাড়লে বেনামে থাকা শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ পদ্ধতিতে চক্রটির হাতে ভালো অঙ্কের টাকা চলে আসে। এরপর কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ দেয় কমিশন। পরে দেওয়া হয় নতুন শেয়ার ইস্যুর সুযোগ।


এক্ষেত্রে বাজার থেকে আয় করা মুনাফার টাকাই শেয়ার মানি ডিপোজিট (নতুন শেয়ার কেনার অর্থ) হিসাবে ব্যবহার করে। এভাবে কোনো ধরনের টাকা ছাড়াই কোম্পানির মালিক হয়ে যায় চক্রটি। এমারেল্ড অয়েলে ঘটেছে একই ঘটনা।


অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল শুরু থেকেই শেয়ারবাজারে দুর্বল কোম্পানি। জালিয়াতির মাধ্যমে এ কোম্পানি বেসিক ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল। এ ঋণ খেলাপি হওয়ায় কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিবসহ বড় অংশ বিদেশে পলাতক।


এ অবস্থায় কারসাজির জন্য পরিকল্পিতভাবেই কোম্পানিটি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় মিনোরি বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ২০২০ সালের শেষদিকে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫শ শেয়ার কেনে মিনোরি। শতকরা হিসাবে ওই সময়ে যা ছিল কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। ওই সময়ে প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৮ থেকে ১০ টাকা।


এরপর ২০২১ সালের ২ মার্চ এমারেল্ড অয়েলের পর্ষদ ভেঙে দেয় বিএসইসি। ওইদিন কোম্পানিতে নিয়োগ দেওয়া হয় ৬ জন স্বতন্ত্র পরিচালক। সেখানে চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শহিদুল ইসলামকে।


অন্য পাঁচ পরিচালক হলেন বিআইবিএম-এর প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার দেব, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার ও সজিব হোসাইন এবং শাহিনুর খানম।


বিএসইসির আদেশে বলা হয়, পাঁচ স্বতন্ত্র পরিচালকের বাইরে শেয়ারধারীদের মধ্য থেকে দুজন পরিচালক থাকবেন। তবে যাদের হাতে কোম্পানির ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, তারাই যোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও মাত্র এই ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার দিয়েই দ্রুতই মিনোরিকে পুরো কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়।


পর্ষদে মনোনয়ন দেওয়া হয় মিনোরির তিনজন পরিচালক। তারা হলেন মো. নাসির সিকদার, মোহাম্মদ মুরাদ হাসান ও মো. রুবেল সরদার।


ওই সময়ে কোম্পানির সাতজন উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে কোম্পানির ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার ছিল। এর মধ্যে সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ২১ দশমিক ৪১, সৈয়দ মনোয়ারুল ইসলাম ২ দশমিক ০৩ শতাংশ, সজন কুমার বসাক ২ দশমিক ২৩, অমিতাভ ভৌমিক ২ দশমিক ২৩, এএসএম মনিরুল ইসলাম ২ দশমিক ৩ এবং মো. এনামুল হক খানের কাছে দশমিক ৫৩ শতাংশ শেয়ার ছিল। নতুন পর্ষদে প্রকৃত উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিষিদ্ধ করা হয়। কোম্পানির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় মিনোরি।


৯ মাস পর ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর মিনোরি বাংলাদেশ, এমারেল্ড অয়েলে তাদের আগের বিনিয়োগকে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে এর বিপরীতে নতুন শেয়ার ইস্যুর করতে কমিশনের সম্মতির জন্য আবেদন করে। কিন্তু শেয়ার মানি ডিপোজিটের পক্ষে মিনোরি কোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে পারেনি।


এছাড়াও নির্ভরযোগ্য কোনো প্রাথমিক দলিল উপস্থাপনেও ব্যর্থ হয় তারা। কিন্তু এর কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। রহস্যজনকভাবে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর মিনোরির প্রস্তাবে শর্তসাপেক্ষে সম্মতি দেয় বিএসইসি।


শর্তগুলো হলো-এমারেল্ড অয়েলে মিনোরির পূর্বাপর বিনিয়োগ শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে গণ্য হবে। তবে শেয়ার মানি ডিপোজিট পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। কোম্পানির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের (পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত অর্থ) প্রয়োজন মেটাতে এ তহবিল ব্যবহার হবে। কিন্তু অধিকাংশ শর্তই মিনোরি বাংলাদেশ মানেনি। কারণ, একদিকে বিএসইসির শর্তহীন সহযোগিতা, অপরদিকে পুরো কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।


গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মিনোরি বাংলাদেশ এসআর ইসলাম অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মকে দিয়ে এমারেল্ড অয়েলে শেয়ার মানি ডিপোজিট বা মূলধন বিনিয়োগবিষয়ক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে কোম্পানিতে ৩২ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৫২৩ টাকা শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে দেখানো হয়।


প্রতিবেদনে এসআর ইসলাম অ্যান্ড কোম্পানির একজন অংশীদার মো. ওয়াহিদুর রহমান দাবি করেন ২৭ কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ৯২২ টাকা কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা এমারেল্ড অয়েলের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। ১৬ কোটি ৯১ লাখ ২১ হাজার টাকা সরাসরি মিনোরি বাংলাদেশ পে করেছে। তবে এ দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেননি।


প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিএসইসির শর্ত অনুসারে বাকি ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬০১ টাকা নগদ মূলধন আয় করেছে। সেক্ষেত্রে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি মূলধনের ব্যবহার নিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে, যা জালিয়াতিপূর্ণ। ওইসব খরচ ও বিনিয়োগের সপক্ষে কোম্পানির নির্ভরযোগ্য কোনো ডকুমেন্ট নেই।


টানা ২ বছরে অনেক নাটকীয়তা শেষে গত বছরের ২৩ মার্চ মিনোরির কাছে শেয়ার কেনার প্রাথমিক চিঠি দেয় বিএসইসি। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর এমারেল্ড অয়েলের নতুন শেয়ার ইস্যুর জন্য সম্মতি দেয় সংস্থাটি।


সেখানে বলা হয়, কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৪টি নতুন শেয়ার ইস্যু করবে। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। ফলে শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়াবে ৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪০ টাকা। আর এ টাকা মিনোরি বাংলাদেশের পক্ষে নগদ পরিশোধ করতে হবে। নতুন বিনিয়োগের আগে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৫৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।


আর মিনোরির তথা কথিত বিনিয়োগের পর এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ৪০ টাকা দেখানো হয়। অর্থাৎ নতুন শেয়ারের পরিমাণ কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সম্মতিপত্র দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে এ শেয়ার কিনতে হবে। এছাড়াও এ শেয়ার বরাদ্দের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর লকইন (বিক্রি করা যাবে না) থাকবে।


জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, বেশকিছু কোম্পানি দীর্ঘদিন বাজারে বন্ধ অবস্থায় পড়ে ছিল। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে আছে; কিন্তু লভ্যাংশ পাচ্ছে না।


বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ওই ধরনের কয়েকটি কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে। এমারেল্ড অয়েল তার মধ্যে একটি কোম্পানি। এখানে কমিশনের কোনো স্বার্থ নেই। তবে কোনো কোম্পানি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করলে ব্যবস্থা নেবে কমিশন। তিনি বলেন, কেউ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।


এদিকে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে এমারেল্ড। সেখানে তাদেরকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে সেট কম আইটি লিমিটেড। সেখানে ১২৩ জন বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছে বলে জানানো হয়। যার মধ্যে মাত্র ১টি শেয়ার রয়েছে-এ ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্য সাতজন। এজিএম-এর আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।


কোম্পানি উল্লেখ করেছে, ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর প্রতি শেয়ারের বিপরীতে আয় ৭৩ পয়সা। এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। এক্ষেত্রে কোম্পানির আগের উদ্যোক্তা এবং পরিচালকরা যে ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে, তার বিপরীতে কোনো লভ্যাংশ মিলবে না। এরপর কোম্পানিটি ‘বি’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়।


এদিকে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি ৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখিয়েছে। আগের বছরের শুরুতে যা ছিল ৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।


কিন্তু এই সম্পদের সত্যতা ও অস্তিত্ব মেলেনি। কারণ সম্পদের কোনো রেজিস্টার নেই। আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষে ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার মজুত পণ্য আছে। কিন্তু এর সপক্ষে প্রমাণ নেই। কোম্পানিটির ১৩০ কোটি ৪৪ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেখানো হলেও এই ঋণের বিপরীতে ২০২১-২২ অর্থবছরে কোনো সুদজনিত ব্যয় নেই।


নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আরও উল্লেখ করেছে, ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মিনোরি বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা এমারেল্ডে ৩২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা বলা হলেও নিরীক্ষা সময়ে ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের তথ্য মিলেছে। আবার ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তারা ২৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা শেয়ার মানি ডিপোজিটের কথা বলেছে। কিন্তু এমারেল্ড অয়েল রিসিভ করেছে ১৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।


এক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, মিনোরি বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট থেকে এমারেল্ডের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা স্থানান্তর হয়নি। এর ব্যাখ্যায় কোম্পানিটি বলেছে, তারা টাকা নগদ লেনদেন করেছে। এমারেল্ডের আগের ম্যানেজমেন্টের অপেশাদারির কারণে কোনো ব্যাংক তাদের সহায়তা করছে না। নতুন পর্ষদ আসার পরই কোম্পানিতে শেয়ারমূল্যে কারসাজি শুরু হয়। একের পর এক মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছড়ানো এবং চিহ্নিত একটি চক্রের অংশগ্রহণে দাম বাড়ানো হয়।


এ সময়ে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার ১৬ থেকে ১৮০ টাকায় উন্নীত হয়। অর্থাৎ দুই বছরে শেয়ারের দাম ১২ গুণ বেড়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৩ বছরে বিএসইসিতে ৫টি প্রতিবেদন পাঠায় ডিএসই। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রতিবেদন পাঠায়। সেখানে এমারেল্ড অয়েলের সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়। ২০২৩ সালের ২৪ মে একই ধরনের আরেকটি প্রতিবেদন পাঠায়। তৃতীয় প্রতিবেদন পাঠায় ওই বছরের ২৫ জুলাই।


প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তায় কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। দুইদিন পর ২৭ জুলাই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন নিয়ে একটি পরিদর্শন রিপোর্ট পাঠায়। সর্বশেষ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর কোম্পানিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন পাঠায় ডিএসই। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ব্যাপারে বাস্তবে মিল পাওয়া যায়নি। কিন্তু এর কোনো কিছু আমলে নেয়নি কমিশন।


শেয়ার করুন