০৭ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ০৬:৪১:৫৩ অপরাহ্ন
সব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা নয়, তালিকাও তৈরি হয়নি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৫-২০২৪
সব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা নয়, তালিকাও তৈরি হয়নি

প্রায় আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হলেও তাঁদের সবার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে না। কেবল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছে সরকার। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে নেওয়া রাষ্ট্রীয় ভাতার টাকা সুদসহ ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও মামলা চালানোর খরচ বিবেচনা করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের কথা জানানো হলেও তাঁদের তালিকা মন্ত্রণালয়ের সনদ ও গেজেট শাখায় নেই। তাই তাঁদের মধ্যে কতজন চাকরি নিয়েছিলেন, সেই সংখ্যা এখনো অজানা। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বলছে, তালিকা তৈরি প্রক্রিয়াধীন।


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সনদ বাতিল হওয়া সবার (আট হাজার) বিরুদ্ধে মামলা করা কঠিন। যাঁরা ভুয়া সনদে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। যাঁরা ভুল তথ্য দিয়ে ভাতা নিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, এমনিতেই আদালত মামলায় ভারাক্রান্ত। তাই উদাহরণ হিসেবে কিছু মামলা করা হবে।


মামলার খরচের বিষয়টিও আছে। মামলা কীভাবে চালানো যায়, সে পরামর্শ চেয়ে আইনজীবীর কাছে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী গত ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচিতে আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের কথা প্রথম জানান। পরদিন (১৮ এপ্রিল) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও একই কথা জানান তিনি। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বৈঠকে মন্ত্রী জানান, ওই ব্যক্তিরা জালিয়াতি বা প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁদের নেওয়া ভাতার টাকা সুদ-আসলে ফেরত পেতে মামলা করতে হবে। কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম ভাতার টাকা সুদ-আসলে আদায় করতে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন।


সংসদীয় কমিটিও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নেওয়া ভাতা আদায় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়কে। সূত্র জানায়, গত বুধবার অনুষ্ঠিত কমিটির পরবর্তী বৈঠকে ওই সুপারিশের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয় মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, জামুকার সুপারিশের আলোকে যেসব ব্যক্তি ভুয়া কাগজপত্র/দলিল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে বিগত দিনে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা নিয়েছেন, তাঁদের গেজেট বাতিল হলে ওই ব্যক্তি/উপকারভোগীর তথ্য ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) বাতিল/নিষ্ক্রিয় হয় এবং তাঁদের সম্মানী ভাতা তাৎক্ষণিক বন্ধ হয়ে যায়। অতীতে তাঁরা যে টাকা পেয়েছেন তা আদায় করে সরকারি কোষাগারে দিতে জেলা প্রশাসক/উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে কতজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকা মন্ত্রণালয়ের সনদ শাখায় নেই। তালিকা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। 

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সনদ) মোহাম্মদ আফরাজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তাঁদের শাখায় নেই। তাঁদের কাছে এমন বিষয় পাঠানো হয় না। গেজেট শাখায়ও ওই তালিকা নেই বলে জানান উপসচিব (গেজেট) হরিদাস ঠাকুর। তিনি বলেন, এই তালিকা জামুকার কাছে থাকতে পারে। সুনির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে গেজেট শাখা বাতিল করে।


তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আগের তালিকার সঙ্গে এখন মেলাতে হবে। যারা বাদ পড়েছে, সেটা দেখলেই হয়। তালিকা হালনাগাদ করতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলব।’


এ বিষয়ে জামুকার মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রুবাইয়াত শামীম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, তালিকা তৈরি প্রক্রিয়াধীন আছে। তাই এখনো মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়নি।


শেয়ার করুন