২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:১৬:০৯ অপরাহ্ন
স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে এসডিজির অভীষ্ট অর্জন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২৪
স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে এসডিজির অভীষ্ট অর্জন

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়ানো, আগের প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তর করার কৌশল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই এসডিজির অভীষ্ঠ লক্ষ্য পূরণ করা হবে। এজন্য জনস্বার্থ বিবেচনা করে প্রকল্প নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। একদিকে মেগা প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন, আর অন্যদিকে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতিসংঘ ঘোষিত ২০০০-২০১৫ সাল পর্যন্ত এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনের পর এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ। এসডিজির ১৭টি অভীষ্ঠ হলো- দারিদ্র্য বিলোপ; ক্ষুধা মুক্তি; সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ; মানসম্মত শিক্ষা; লিঙ্গ সমতা; নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন; সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ¦ালানি; শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি; শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো; অসমতার হ্রাস; টেকসই নগর ও জনপদ; পরিমিত ভোগ ও উৎপাদন; জলবায়ু কার্যক্রম; জলজ জীবন; স্থলজ জীবন; শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব। সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট সলুশন নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) এসডিজির স্বাধীন মূল্যায়ন প্রতিবেদন ২০২৩ অনুযায়ী, এসডিজি অর্জনে বিশ্বের ১৬৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১তম। ২০২২ সালে ১৬৩ দেশের মধ্যে যা ছিল ১০৪তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে দুটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথে ও ছয়টি লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে। এসডিজির পাঁচটি লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। তিনটি লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। একটি মূল্যায়নের জন্য উপাত্তে ঘাটতি রয়েছে। তথ্য মতে, ২০১৭ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের স্বাধীন মূল্যায়নে বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ছিল ১২০তম ও ইনডেক্স স্কোর ৫৬ দশমিক ২। তবে ২০২৩ সালে সাত বছরে র?্যাংকিং ও ইনডেক্স স্কোর উভয় দিকে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ যে দুটি অভীষ্টে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে, সেগুলো হলো- দারিদ্র্য বিলোপ ও গুণগত শিক্ষা। আর বাংলাদেশের সামনে প্রধান যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা হচ্ছে- ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের ফলে বাণিজ্য সুবিধায় যে অভিঘাত আসবে, সেটি মোকাবিলা করা। বিশ্লেষকদের মতে, এসব অভিঘাত মোকাবিলা করার জন্যই চলমান উন্নয়ন প্রকল্প যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাপ্ত এবং যথাযথ যাচাই-বাছাই করে, জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে নতুন পরিকল্পনা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা এসডিজি অর্জনে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। শুধু দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নই নয়; উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হলে দেশের অর্থনীতি কতটা চাঙা হবে এবং স্থানীয়রা কতটা উপকৃত হবে- তা বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমাদের প্রথমে ভাবতে হবে ফলাফল কী হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রকল্প নেয়ার পর জনগণ কতটা উপকৃত হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এমনভাবে করতে হবে যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। গত ৭ মে সরকারি বাসভবন গণভবনে স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বিনির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের রূপরেখা-সংক্রান্ত উপস্থাপনা দেখার সময় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে এবং প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধানের সময়পোযোগী ও যথোপযুক্ত এসব পদক্ষেপ এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের গতিকে ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি, শিক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য অভূতপূর্ব। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১৭-৩১ অবলম্বন করেছে। জেন্ডার সমতায় সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে। শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতা অর্জন, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক এবং সর্বোপরি মাথাপিছু আয়ে ও সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ সূচকে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তানও বিস্মিত। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই এমডিজির মতো এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে বাংলাদেশ। ইনডেক্স স্কোরে বৈশ্বিক র?্যাংকিংয়ে একশর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৬৫ দশমিক ৯। 


এই সাফল্যকে আরো এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মো. আখতার হোসেন জানান, বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে ভালো করছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনা ও সবার প্রচেষ্টায় এমডিজির মতো এসডিজিতেও আমরা সাফল্য লাভ করতে চাই। 


সংশ্লিষ্টদের মতে, এসডিজির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো শিক্ষার সর্বজনীন প্রয়োগের মাধ্যমে মেধাবী ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। কারণ শিক্ষা তথা জ্ঞাননির্ভরতা ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই হতে পারে না।


 এই বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে টেকসই উন্নয়নের অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা হলো ‘সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি’। এই লক্ষ্যমাত্রার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো- সাশ্রয়ী মূল্যের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে উদ্ভাবনমুখী শিক্ষাকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োগ করা। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করছে। অন্যদিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে শিক্ষা ও প্রযুক্তির খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, যা এসডিজির শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত লক্ষ্য অর্জনকে আরো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়ে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে চলছে।

 অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সোসাইটি’, ‘স্মার্ট ইকোনমি’ ও ‘স্মার্ট সরকার’ গড়ার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ারই লক্ষ্য। আর এক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই দারিদ্র্য বিলোপ; ক্ষুধা মুক্তি; সুস্বাস্থ্য; মানসম্মত শিক্ষাসহ সুষম উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ইতোমধ্যেই আমার গ্রাম আমার শহর, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল ও বঙ্গবন্ধু টানেল বাস্তবায়ন হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মোকাবিলায় এবার শিল্পায়নের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে এসডিজি অর্জনের পথ সুগম হবে।


শেয়ার করুন