০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৭:০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন
বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট: গোড়ার গলদেই প্রকল্প রুগ্‌ণ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৫-২০২৪
বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট: গোড়ার গলদেই প্রকল্প রুগ্‌ণ

২০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় কোনো ফুটপাত নেই, নেই ইউটার্ন নেওয়ার ব্যবস্থা, পাশের নিষ্কাশনব্যবস্থাও অপর্যাপ্ত, পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য নেই কোনো ফুটওভারব্রিজ। এমন আরও অনেক সমস্যা নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হবে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। সারা বিশ্বে বাসে যাত্রী চলাচলের এটি সুপরিচিত নাম হলেও বাংলাদেশে বিআরটি প্রকল্প যেন ভোগান্তির অন্য নাম।


জানা যায়, ২০১২ সালে প্রকল্প নেওয়া হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ছয়বার মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বরে শেষ করার কথা। পরিকল্পনায় বড় ত্রুটি থাকায় প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই একে ‘সিক প্রজেক্ট’ বা রুগ্‌ণ প্রকল্প আখ্যা দিচ্ছেন। অভিযোগ আছে, শুরুতে প্রকল্পের দুই চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে পারেনি। পরে ঋণদাতা সংস্থা থেকে আগাম টাকা নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে সেই সংকট নেই। এখন প্রকল্প শেষ না হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওই অঞ্চলের ট্রাফিক ও ব্যস্ত রাস্তায় কাজ করার সমস্যার কথা।


প্রকল্প পরিচালক ইলিয়াস শাহ গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাসস্টেশন, গাজীপুর ও বিমানবন্দর অংশে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। তাঁর আশা, আগামী ডিসেম্বরেই কাজ শেষ হবে।


প্রকল্পটি নিয়ে গাজীপুরে গত ২৭ মার্চ এক গণশুনানিতে উঠে আসে নানা অসংগতির চিত্র। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ভোগড়া এলাকায় ফ্লাইওভারের উচ্চতা কম। এতে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হবে। ড্রেন অত্যন্ত সরু হওয়ায় মহাসড়কের পানি সরবে না। বিআরটি স্টেশনে আসা যাওয়ার জন্য ৭২ ফুট উঁচু সিঁড়ি বানানো হয়েছে। নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা এই সিঁড়ি পার হতে দুর্ভোগে পড়বেন। প্রকল্পটির চান্দনা চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ী মোড় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের কোথাও এক ইঞ্চিও ফুটপাত রাখা হয়নি। এমনকি দীর্ঘ পথের কোথাও নেই কোনো ইউটার্ন। 


এ প্রসঙ্গে বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে তাঁরা ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। যেগুলো সমাধানযোগ্য, সেগুলো প্রকল্প চলাকালীন ঠিক করা হচ্ছে। বাকিগুলোও হয়তো ধীরে ধীরে ঠিক হবে।


ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে দ্রুততম সময়ে চলাচলের জন্য বিআরটি প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।


২০১১ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকল্পের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করে। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। তখন প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বর।


সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেন, বাংলাদেশে এই প্রকল্পে এত সময় আর ভোগান্তি হয়েছে যে মানুষের মধ্যে পুরো প্রকল্প নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে। প্রকল্পের সমীক্ষায় বড় ধরনের ভুল থাকায় এখন ভুগতে হচ্ছে। 


গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পথে ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার করিডর নির্মাণে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এডিবি, এএফডি এবং জিইএফ। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কিন্তু শুরু থেকে প্রকল্পের কাজে গতি ছিল না। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়েছে। প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।


প্রকল্পটি চালু করতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রহমান বলেন, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর অংশটি ব্যস্ততম সড়ক। ২৪ ঘণ্টা এই সড়কে যানবাহনের আধিক্য তো থাকেই, পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চলাচলও বড় ইস্যু। ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনা এলে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। উত্তরায় ২০২৩ সালে দুর্ঘটনার পর দিনে গার্ডার বসানোর কাজ বন্ধ রাখা হয়। তিনি বলেন, রাতে কাজ করতে গেলে সংকট আরও বাড়ে। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় তাদের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির অনুরোধ জানানো হলেও সব সময় তাঁরা থাকেন না। এ ছাড়া করোনাকালে কাজ পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়েছিল।


ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, সারা বিশ্বে বিআরটি যাত্রী পরিবহনে সুপরিচিত বিষয়। প্রকল্প নিয়ে নানা সমস্যার কারণে এখানে মানুষের কাছে ভুলভাবে যাচ্ছে।


শেয়ার করুন