০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:৫৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনধান কাটা ও বুদ্ধিজীবীদের দুষেও চিন্তা কাটছে না
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৫-২০২৪
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনধান কাটা ও বুদ্ধিজীবীদের দুষেও চিন্তা কাটছে না

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে পড়েছিল রেকর্ড সংখ্যক কম ভোট। দ্বিতীয় ধাপে এসেও পরিস্থিতির উন্নতি হলো না। বাকি দুই ধাপেও কেন্দ্রে ভোটার আনতে জোর প্রচেষ্টা চালালেও খুব একটা সুফল যে মিলবে না, তা মোটামুটি আন্দাজ করা যাচ্ছে। 


চার মাস আগে জাতীয় নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নানা কথা হয়েছিল। কমিশনের হিসাবে, জানুয়ারির ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪২ শতাংশের মতো। এরপর তৃণমূলের এ নির্বাচনেও ভোটারের খরায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ক্ষমতাসীনদের কপালে। উপজেলায় দুই ধাপে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৬ ও ৩৭ শতাংশ। 


প্রথম ধাপের ভোটের পর ভোটার উপস্থিতি নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তখন বলেন, ধান কাটার মৌসুম থাকায় মানুষ ভোট দিতে আসেননি। আর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের লাইনে মানুষ না দেখে তিনি ব্যাখ্যা দেন, ভোট নিয়ে বিএনপি ও বুদ্ধিজীবীদের অপপ্রচারে মানুষ বিভ্রান্ত। তাই তাঁরা ভোট দিতে আসছেন না। 


সাধারণ সম্পাদক এমন সব ব্যাখ্যা হাজির করলেও এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না তাঁরা। আলাপকালে কয়েকজন নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিরোধী দল ভোটে না থাকায় ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। দলের লোকজনও ভাবছেন, ভোটে হার-জিত যাই-ই হোক, সব নিজেদের। তাই তাঁরা ভোট দিতে আসছেন না। তাই শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিলেও ভেতরে ভেতরে একধরনের দুশ্চিন্তা ভর করেছে দলের মধ্যে। 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে উপজেলা নির্বাচনে ভোট কম পড়াটা শুভ নয়। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভোটের প্রচার-প্রচারণা এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। 


বিএনপির বর্জন করা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছিল বলে দাবি করেছিল ক্ষমতাসীনেরা। চার মাসের মাথায় উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ থেকে আশঙ্কা করা হয়েছিল এবারও ভোটার উপস্থিতি কম হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নৌকা প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও কমেছে। 


আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন নেতার মতে, মানুষের মধ্যে একধরনের ধারণা তৈরি হয়ে গেছে, ভোট যাকেই দেওয়া হোক না কেন, প্রভাবশালীর পছন্দের প্রার্থী কিংবা আগে নির্ধারিত কেউ জিতে যান। এটা মানুষের মনে গেঁথে গেছে। তাই তাঁরা ভোটকেন্দ্রবিমুখ। আবার বিএনপির মতো বড় একটা দল নির্বাচনে নেই। মানুষ মনে করে সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ভোট যাকেই দেওয়া হবে আওয়ামী লীগই জিতবে। এ কারণে মানুষ ভোট দিতে আসেন না। 


চট্টগ্রাম জেলার একজন আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন না হওয়ায় মানুষের মধ্যে ভোটবিমুখতা তৈরি হয়েছে। ভোটাররা মনে করছেন, তাঁরা ভোট না দিলেও নির্দিষ্ট প্রার্থী বিজয়ী হয়ে যাবেন, এ কারণে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না। 


আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা মনে করে লোক তো সবই আওয়ামী লীগের, যে জিতবে সে-ই আমাদের। তাই তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়া দরকার।’


শেয়ার করুন