০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৭:০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
নজরদারিতে আনারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৪
নজরদারিতে আনারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য মো. আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় নজরদারিতে আছেন তার স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের একাধিক নেতা। এদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী অনেকেই আছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক টিম তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছেন। যে কোনো সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নেওয়া হতে পারে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, খুনের মাস্টারমাইন্ড শাহীনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে এরই মধ্যে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর আগে শাহীনের ম্যানেজার জামাল, তার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাড়ির চার নিরাপত্তাপ্রহরী, গাড়ি চালকসহ কয়েকজনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে শাহীনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে ডিবির তদন্ত টিম। 

এদিকে এমপির স্বজনদেরও দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ জড়িত। ২০১৭ সালেও বিরোধী পক্ষ এমপি আনারকে হত্যাচেষ্টা করে। সে ঘটনায় থানায় মামলা হয়, আসামিরাও সব স্বীকার করে। তবে মামলাটি পরে মীমাংসা করা হয়। এদের আইনের আওতায় আনলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে স্বজনদের ধারণা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এমপি আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড তারই বাল্যবন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন; স্বর্ণের ব্যবসায়িক বিরোধ থেকে তিনি হত্যার পরিকল্পনা করেন। তবে এমন নৃশংস হত্যার পেছনে শুধু ব্যবসায়িক বিরোধ এমনটি মনে করেন না খোদ তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের ধারণা, এমপি হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীনের পেছনে আরও কেউ রয়েছে। তবে শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ায় অনেকটাই অন্ধকারে রয়েছে তদন্তকারীরা। 

নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। হত্যায় সরাসরি জড়িত চার জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ। পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরের নানা তথ্য জানিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের পুলিশ। অথচ এখনো উদ্ধার হয়নি এমপি আনারের লাশ বা লাশের কোনো টুকরো অংশ। আনারের মোবাইল ফোনসহ কোনো কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি কলকাতার পুলিশ। এ ঘটনায় ডিএমপির ডিবি প্রধানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম রোববার সকালে ভারতে পৌঁছেছেন। তারা ইতিমধ্যে কলকাতায় গ্রেফতার কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সোমবার হত্যার ঘটনাস্থল কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের ফ্ল্যাট এবং বাগজোলা খাল পরিদর্শন করেন। কিন্তু লাশের কোনো খোঁজ পাননি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এমপি আনারের লাশ উদ্ধারের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। 

এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি ফয়সাল এবং মোস্তাফিজ সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রামে পর্যায়ক্রমে আত্মগোপনে থেকে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছে বলে ধারণা ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ দুই আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। ডিবির এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ফয়সাল এবং মোস্তাফিজ হত্যা মিশন শেষ করে ১৫ মে বৈধপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা এসে ওঠে শাহীনের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায়। পরদিন সেখান থেকে আত্মগোপনে চলে যায়। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় দেখা গেছে, ফয়সাল ও মোস্তাফিজের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান ছিল বসুন্ধরার ওই বাসায়। তারা সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ করে আত্মগোপনে আছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রামে আত্মগোপনে আছে। 

এমপি আনারের বড় ভাই এনামুল হক ইমান সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে আনারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আব্দুর রশীদ খোকন। খোকনের পক্ষে কাজ করেন কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আউব হোসেন, ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী। তারা এক জনসভায় প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয় বঙ্গের মাটিতে জায়গা হবে না আনারের।’ 

তিনি আরও বলেন, আনারের মৃত্যুশোক না কাটতেই উপনির্বাচনের জন্য এলাকায় তোড়জোড় শুরু করেছে কেউ কেউ। তারা আমাদের হুমকি-ধমকিও দিচ্ছে। আমাদের চাওয়া আনারের লাশ উদ্ধার হোক, তাকে মা বাবার পাশে দাফন করব।

এমপি আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ সোমবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের ধারণা শুধু শাহীন না এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও অনেকেই আছে। কারণ এর আগেও ২০১৭ সালে এমপি স্যারকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। তখন কালীগঞ্জ থানায় মামলাও হয়। সেই মামলাই গ্রেফতার দুই আসামি আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হত্যা পরিকল্পনার পেছনে স্থানীয় অনেকের নাম উল্লেখ করেছিল। পুলিশ সেই মামলার চার্জশিটও দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে মামলাটি মীমাংসা হয়ে যায়।  

তিনি আরও জানান, এমপি আনার গত আট মাসে আরও দুবার ভারত গেছেন। সব সময় তিনি রিলাক্স মুডে থাকতেন। কোনো ধরনের হুমকিতে আছেন এমন মনে হয়নি। তবে রাষ্ট্রীয় সফরে শ্রীলংকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে গেলেও ভারতে যাওয়ার সময় কখনই তাকে সঙ্গে নিতেন না বলে জানান। 

গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। কলকাতার ব্যারাকপুরসংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। ১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন আনার। পরে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। এমপি খুনের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিনই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।


শেয়ার করুন