২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৬:২২:০১ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীতে ফসলি জমিতে পুকুর খননে বাধা দেয়ায় হুমকির মুখে ৩ পরিবার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৪
রাজশাহীতে ফসলি জমিতে পুকুর খননে বাধা দেয়ায় হুমকির মুখে ৩ পরিবার

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় অবৈধভাবে ও জোরপূর্বক ফসলি জমিতে পুকুর খননে বাধা দেওয়ায় প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে তিনটি পরিবার। অব্যাহত হুমকির প্রেক্ষিতে পরিবারগুলো এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাড়িছাড়া হয়ে আছেন বাবা ও ছেলে।


এরইমধ্যে অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এসকেভেটর মেশিনসহ একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।


ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোরে উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্তর নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক জমির মালিক লুৎফা বেগমের বাড়িতে গিয়ে তার স্বামী আবু কাউসার মো: শামসুজ্জামানকে খোঁজ করেন। কিন্তু এসময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।


নিরাপত্তাহীনতার কারণে তার আগে থেকেই তিনি বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তার ছেলে হাসান আল বান্নাও বাড়ি ছাড়া। তাদেরকে বাড়িতে না পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও তার লোকজন লুৎফা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পুকুর খননে বাধা দিলে বা কোথাও অভিযোগ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এছাড়া হুমকিদাতারা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও শাসন-গর্জন করে সেখান থেকে চলে যান।


চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে দেওয়া পৃথক লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বামনদিঘী মৌজার ১২৩৩, ১২৩৫ ও ১২৩৬ দাগের মোট চার কাঠা জমির মালিক তিনজন। তারা হলেন- মোসা: লূৎফা বেগম, মো: ইনতাজ ফকির ও আজল বক্তার। জোরপূর্বক ও ভয় দেখিয়ে তাদের জমিতে পুকুর খননের চেষ্টা করেন বামনদিঘী গ্রামের সিরাজ ফকিরের তিন ছেলে মাসেম, মো: হাসিবুল ও জিয়াউর রহমান।


এতে জমির মালিকরা বাধা দিলে তাদের ভয়ভীতি দেখান মাসেম, হাসিবুল ও জিয়াউর। তাদের হুমকির প্রেক্ষিতে নিরুপায় হয়ে লূৎফা বেগম, ইনতাজ ফকির ও আজল বক্তার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেন। এদিকে, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও’র নির্দেশে চারঘাট থানা পুলিশের একটি দল সোমবার রাতে অভিযান চালায়। পরে শলুয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বামনদিঘী মৌজার ১২৩৩, ১২৩৫ ও ১২৩৬ দাগের পাশের ফসলি জমিতে পুকুর খননকালে এসকেভেটর মেশিনসহ একজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্তর নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক জমির মালিক লুৎফা বেগমের বাড়িতে গিয়ে তার স্বামী আবু কাউসার মো: শামসুজ্জামানকে খোঁজ করেন। কিন্তু এসময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।


নিরাপত্তাহীনতার কারণে তার আগে থেকেই তিনি বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তার ছেলেও বাড়ি ছাড়া হয়ে আছেন। তাদেরকে বাড়িতে না পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও তার লোকজন লুৎফা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পুকুর খননে বাধা দিলে বা কোথাও অভিযোগ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এছাড়া হুমকিদাতারা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও শাসন-গর্জন করে সেখান থেকে চলে যান। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের তিনজনের চার কাঠা জমিসহ এবং পাশের আরেকজনের দুই কাঠা জমিতে পুকুর খনন করতে চান প্রভাবশালীরা। তবে তাদের জমিতে পুকুর খননে ব্যর্থ হলেও প্রভাবশালীরা পাশের আরেকজনের জমিতে পুকুর খনন শুরু করেন। এই পুকুর খননের ফলে তাদের জমিও যে কোনো সময় ধ্বসে পুকুরে পরিণত হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।


এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান শান্ত গণমাধ্যমকে জানান, হুমকি দেওয়ার ঘটনার সাথে আমার কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা নেই। এছাড়া লুৎফা বেগমের বাড়িতে আমি যাইনি। মাসেম, হাসিবুল, সোহাগরা গিয়েছিল। আর আমি শুধু এসকেভেটর বা ভেকু মেশিনের ব্যবসা করি। এসব ঝামেলার মধ্যে আমি নেই। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সাইদা খানম জানান, ফসলি জমিতে কেউ পুকুর খনন করতে পারবে না। যে বা যারাই পুকুর খনন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এরই মধ্যে এসকেভেটর মেশিনসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। হুমকির বিষয়টিও তারা অবগত হয়েছেন। ইউএনও’র নির্দেশে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।


শেয়ার করুন