রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বিজিবি সদস্য হাসান আলী ও ফেন্সি খাতুন নামের দম্পতির বিরুদ্ধে পূর্বের জের ধরে জহির উদ্দীন নামের এক নৌবাহিনী সদস্যকে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার (২১ জুন) গোদাগাড়ী থানায় ভুক্তভোগী জহির উদ্দীন সাধারণ ডায়রী করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেল সাড়ে ৬টায় বিদিরপুর গ্রামের লাইনপাড়ায় এমন ঘটনা ঘটে। অভিযোগকারী হলেন গ্রামের মৃত সৈয়ব আলীর ছেলে জহির উদ্দীন (৩৪)। অভিযুক্ত হাসান আলী (৩৬) মৃত সৈয়ব আলীর ছেলে। ফেন্সি খাতুন (৩২) হাসান আলীর স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, পৈতৃক ৩ শতক জমিজমা ও ৯০ হাজার টাকা পয়সা লেনদেন নিয়ে ভাইদের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ। কোন ভাইয়ের মতের মিল নেই। তবে, ছাগলে গাছ খাওয়া নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। একই বাড়ীতে তাঁদের বসবাস ছিল। একে অপরকে সফল হতে সহযোগীতাও করে। কিন্তু পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা চলছে। হাসান আলী তাঁর স্ত্রী ফেন্সি খাতুনকে নিয়ে নিজের জায়গা জমি কিনে বাড়ি করে থাকছেন। বাপের বসতভিটায় সব ভাইবোনদের জমির অংশীদার আছে। কিন্তু হাসান আলী ও তাঁর স্ত্রী বসতভিটায় এসে শাকসবজি করে। সেই শাকসবজি অন্য এক ভাইয়ের পোষা ছাগলে খায়। এই জন্য হাসান আলী ও ফেন্সি খাতুন বাগানে বেড়া দিতে আসলে কথা-কাটাকাটি হয়। ৮ ভাই ৩ বোনের জায়গা জমির সঠিকভাবে পাওনা মিটিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করলে হাসান আলী ক্ষিপ্ত হোন। সেই সাথে হাতে থাকা ব্যালাট দিয়ে জহির উদ্দীনকে আঘাত করেন।
জহির উদ্দীনের ছোট দুই ভাই আনিকুল ও মনিরুল জানান, একজনই সব ঘটনার উৎস। সে হলো হাসান আলীর স্ত্রী ফেন্সি খাতুন। নাটকীয়তার মাধ্যে এই পরিবারে প্রবেশ করেন। তারপর থেকেই হাসান আলীকে বিশেষ পন্থায় বশীকরণ করে রেখেছেন। যার জন্য ভাইদের দিকে তাঁর দৃষ্টি নেই। স্ত্রীর কথায় হামলা করতে আসেন। স্ত্রী অকথ্য ভাষায় মা বাপ তুলে কথা বললেও কিছু বলেন না হাসান আলী।
মারপিট সম্পর্কে ভুক্তভোগীর বড় ভাই সেনাবাহিনী থেকে অবসর প্রাপ্ত সাইরুল ইসলাম বলেন, সব অশান্তির মুলে আমার ছোট ভাই হাসানের স্ত্রী ফেন্সি। একত্রে থাকা অবস্থায় আমাদের বাড়ি থেকে তাড়ানোর উদ্দেশ্যে আমার স্ত্রীকে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছিল। জোর করে বাড়ি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। উল্টো তাঁরা জমি ও টাকাও দাবি করছে। আমরা বাকী ছয় ভাই হামলা মামলা বা পরিবেশ নষ্ট করবো না বলে কিছুই বলিনা। কিন্তু আমার সামনে, মেজো ও সেজো ভাই থাকা অবস্থায় ছোট ভাই সকলের সাথে হাসান ও তাঁর স্ত্রী ফেন্সি অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেছে। এমনকি জহিরের ওপর আঘাতও করেছে। প্রেমতলী হাসপাতালে পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী জহির বলেন, হাসান ও রাকিব ছাড়া আমরা সব ভাইবোনই ভুক্তভোগী। আমাদের কেনা জায়গায় পর্যন্ত তাঁরা পিলার পুঁতে দখল করার চেষ্টা করছে। আমরা গেলে জমির সঠিক মাপ অনুযায়ী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হাসান ও রাকিব দুই ভাই চুপ থাকে কিন্তু তাঁদের বউগুলোর মুখ অত্যন্ত খারাপ। এমনকি তাঁরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের মারতে চলে আসে। বড় ভাইদের তো সম্মান করেই না উল্টো আমাদের মৃত মা বাবা তুলে গালিগালাজ করে। সেদিন আমাকে গালাগাল ও এলোপাতাড়িভাবে কিল ঘুষি ও ব্যালাট দিয়ে মেরেছে। এমনকি হুমকিও দিয়েছে প্রাণনাশের। এজন্য থানায় অভিযোগ পর্যন্ত করতে হলো।
বিষয়টি সম্পর্কে হাসান আলী কথা না বললেও অভিযুক্ত ফেন্সি খাতুন বলেন, আমার স্বামী বিজিবি তে চাকরি করেন। আমার দেবর আমার বোনকে বিয়ে করার পর থেকে আমাদের সাথে থাকে। যারা অভিযোগ করেছে তারা আমাদের ওপর নির্যাতন করতো। তাই, এখানে আমরা জমি কিনে বাড়ি করে থাকি। এমনকি মুরগির খামার দিয়েছে। আমরা সেদিন দেবরকে মারার জন্য যাইনি। আরসাদের ছাগলে আমাদের করা বাগানের গাছগুলো খাচ্ছিলো। ছাগলে যাতে না খেতে পারে সেজন্য বেড়া দিয়ে ঘিরতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর দেখি জমি বিক্রি করে চলে যাওয়া দেবর জহির উদ্দীন টাকা ও জমির কথা বলছে। সেই সাথে ভিডিও করছে। তখন আমার স্বামী রাগ করে ভিডিও বন্ধ করতে গিয়ে হয়তো আঘাত লেগেছে। এছাড়াও আমার স্বামীর ভাইদের অত্যাচারে ওইদিকে যাইনা।
এ সম্পর্কে অভিযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত গোদাগাড়ী থানার এসআই আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। যেহেতু পারিবারিক বিষয় সেহেতু ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে অল্প সময়ের মধ্যে নিজেরা বসে সমাধান করার কথা বলে এসেছি। মিমাংসায় না বসলে পরবর্তীতে আমরা আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেব।