২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫২:২২ অপরাহ্ন
প্রশ্নফাঁসে জড়িত পিএসসির ডজন রাঘববোয়াল
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২৪
প্রশ্নফাঁসে জড়িত পিএসসির ডজন রাঘববোয়াল

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নফাঁসে এর ভেতর এবং বাইরে এক ডজন রাঘববোয়াল জড়িত রয়েছেন। তাদের কয়েকজন গ্রেফতার হলেও অন্যরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। সন্দেহভাজন এসব রাঘববোয়ালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং অতীত কর্মকাণ্ডের বিষয়াদি পর্যালোচনা করছে সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট। তারা প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন।


সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িতদের প্রায় প্রত্যেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক। আলোচিত সাবেক গাড়িচালক আবেদসহ গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিআইডি।


সিআইডির একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, শুরু থেকেই মানুষের মাঝে একটা পারসেপশন ছিল বিসিএস এবং পিএসসির পরীক্ষাসমূহের সঙ্গে যুক্ত সবাই নীতিবান। যে কারণে এসব পরীক্ষায় কোনো দুর্নীতি হয় না, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না। কিন্তু এক যুগ ধরে প্রশ্নফাঁসের যে অভিযোগ সামনে এসেছে-তা সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, এই চক্রকে নির্মূল করা না গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র। তিনি জানান, পিএসসি আইনে মামলার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনেও মামলার প্রস্তুতি রয়েছে।


রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত সোমবার পিএসসির ছয় কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে আলোচিত ড্রাইভার আবেদ আলীকে ১০ বছর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী, ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামসহ ছয়জন দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) পিএসসির আরও কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করার কথা স্বীকার করেন। গ্রেফতার পিএসসির কর্মকর্তাসহ যারা স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেননি তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করেছে সিআইডি। সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, তাদের আরেকবার রিমান্ডে পেলে ভেতরে বাইরে প্রশ্নফাঁস চক্রের যত রাঘববোয়াল আছে, তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নফাঁসে জড়িত পিএসসির বিভিন্ন পর্যায়ের আরও পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম সামনে এসেছে। তারাও বিভিন্ন সময়ে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।


এদিকে মামলায় অভিযুক্ত সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ ১৪ জনকে গ্রেফতারে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনো তাদের গ্রেফতারের আওতায় আনা যায়নি। সূত্র জানিয়েছে, এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৬০ জনের অধিক। এর মধ্যে ডজনের অধিক রাঘববোয়াল। তাদের কেউ কেউ পিএসসিতে বহালতবিয়তে আছেন। আবার কেউ অবসরে গেছেন বা চাকরিচ্যুত হয়েছেন। আর চক্রের অন্য যারা আছেন, তারা মূলত কেউ প্রার্থী জোগাড় করেন, কেউবা দরদাম ঠিক করেন। কেউবা আবার পরীক্ষার্থীদের গোপন আস্তানায় নিয়ে পড়ান।


তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবিরকে রিমান্ডে পেলে প্রশ্নফাঁসে জড়িত অন্য রাঘববোয়ালদের নাম সামনে আসতে পারে।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বলেন, মামলা তদন্তাধীন। এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।


পিএসসির যুগ্ম সচিব আবদুল আলীম খান যুগান্তরকে বলেন, আমরাও তদন্ত চলমান রেখেছি। সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রেখেই আমরা কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আশা করি তদন্ত প্রতিবেদনে ভালো কিছু দিতে পারব। তিনি বলেন, তদন্তকাজ আমরা স্বাধীনভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি।


এদিকে গত মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীসহ ছয়জন প্রশ্নফাঁস চক্রের অনেক তথ্যই ফাঁস করে দিয়েছেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে রাঘববোয়াল অনেকের নামও। এসব তথ্য সামনে রেখে কাজ করছে সিআইডি।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিএসসিতে কর্মকর্তা পর্যায়ের কিছু লোক প্রশ্ন ফাঁস করতেন। আর তাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন কর্মচারীরা। চক্রে বাইরের যারা জড়িত তারা প্রার্থী সংগ্রহ, টাকার চুক্তিসহ বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। অডিটর প্রিয়নাথ রায় আবেদ আলীকে বিভিন্ন পরীক্ষার সাড়ে ৪০০ প্রার্থী জোগাড় করে দিয়েছেন বলে তিনি আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন। এসব প্রার্থীর প্রত্যেকের সঙ্গে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকায় চুক্তি করেছেন প্রিয়নাথ। গ্রেফতার নোমান সিদ্দিকী লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানার চর আলগি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। ২০০৪ সালে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন চাকরির তদবির করতেন তিনি। তখন এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় অডিটর প্রিয়নাথ রায়ের সঙ্গে। এরপর ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বিক্রি করে নোমান ঢাকার পাশেই একটি গার্মেন্টস কারখানার মালিক হয়েছেন। এছাড়া তার রয়েছে প্লট, ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদ।


শেয়ার করুন