কোটাবিরোধী আন্দোলনে হামলা ও সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশকিছু স্থাপনা। এরমধ্যে হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন ভাঙচুর করা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসব স্থাপনা। আন্দোলনের সময় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে আপাতত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই উড়ালপথের নির্মাতা ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড। একইভাবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ যাত্রী।
রাজধানীর মিরপুর মেট্রোরেল স্টেশন ও সেতু ভবনের অগ্নিসংযোগ নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর মিরপুর-মতিঝিল রুটে বাসের ব্যবসায় ধ্বস নামে। কোনো কোনো বাস সারাদিন চালানোর পরও দিনের খরচ উঠে না। যাত্রী সংখ্যা একদমই কমে গিয়েছে। স্বল্প সময়ে যাতায়াতের জন্য মিরপুর ও মতিঝিল এলাকার সব যাত্রীই মেট্রোরেলকে বেছে নিয়েছেন। এ অবস্থায় মেট্রোরেল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কোনো বিকল্প নেই। তাই সুযোগ বুঝেই তারা মেট্রোরেল বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। এমনটাই বলছেন অনেকে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরবর্তী সহিংসতায় মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে প্রথম অগ্নিসংযোগ করা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চলন্ত বাসে। আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের মেট্রো স্টেশনে কোনো প্রকার ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি। এছাড়াও মেট্রোরেলের পল্লবী, উত্তরা, আগারগাঁও, মতিঝিল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার মেট্রো স্টেশনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় মিরপুর-১০, কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, মেট্রোরেল চলাচলকারী রুটের নিচের সড়কের প্রায় সব এলাকাতেই কোটা আন্দোলনের সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া ছাড়া কোথাও হামলা হয়নি। ভাঙচুর করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা যদি এই কাজ করতো তাহলে অন্য স্টেশনগুলোতেও ভাঙচুর ঘটনা ঘটাতে পারতো। কোনো একটি মহল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই কাজ করতে পারে। এ ঘটনায় বাস সংশ্লিষ্টদের লোকজন জড়িত থাকতে পারে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছিলেন, মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। ৩০ মিনিটের পথ দুই ঘণ্টায়ও যেতে পারছে না। কবে নাগাদ চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। মেট্রোরেলের পাশাপাশি বন্ধ আছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচলও। গত ১৮ ও ১৯ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ের দুটি টোল প্লাজায় আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। এতে টোল প্লাজা দুটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হলেও এখন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যানবাহন চলাচল করছে। টোল আদায় করা হচ্ছে অ্যানালগভাবে। আর মেট্রোরেলের ক্ষতিগস্ত দুটি স্টেশন বন্ধ রেখে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল রাখা ও এলিভেটেড একপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের মাধ্যমে এই যোগাযোগ পথটি সচল রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ যাত্রীরা। আবার অনেকেই বলছেন, সরকার এখন লোক দেখানো কাজ করছে। আন্দোলন ও সহিংসতার কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতে লোকজনের চলাচল একেবারেই কম তাই মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রেখে ঢাকার সড়কে যানবাহনের আধিক্য দেখানোর জন্যই মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রেখেছে। তা নাহলে হানিফ ফ্লাইওভারের মতো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের মাধ্যমে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু রাখতে পারে।