২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৭:০১:০১ অপরাহ্ন
সরকারের কাছে প্রত্যাশা রাষ্ট্র সংস্কার করে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা অর্পণ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৮-২০২৪
সরকারের কাছে প্রত্যাশা রাষ্ট্র সংস্কার করে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা অর্পণ

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা, রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব সুপারিশ উত্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। রাজধানীর আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে নাগরিক সংগঠনটি।


গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো নির্বাচন। আর নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি যথাযথ আইনি কাঠামো সৃষ্টি, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট অন্য বিধিবিধান। এর লক্ষ্য হলো—একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ নির্বাচন আয়োজন করে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা অর্পণ।


সুজনের নির্বাচনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচনপদ্ধতি প্রবর্তনের কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা প্রয়োজন। নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং উক্ত আসনসমূহে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের ব্যাপারে বিবেচনা করা। মনোনয়ন বাণিজ্য অবসানের লক্ষ্যে প্রতিটি দলকে আসনভিত্তিক সংশ্লিষ্ট সব আসনের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুই জন করে প্রার্থী নির্ধারণ করা এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক উক্ত দুই জনের মধ্য থেকে এক জন প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান বাধ্যতামূলক করা।


প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসেবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে কমপক্ষে তিন বছর আগে সংশ্লিষ্ট দলের সদস্যপদ গ্রহণের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা। ভোটার কর্তৃক অপছন্দের প্রার্থীদের বর্জনের জন্য ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন করা। প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয় কমানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীদের পোস্টার ছাপানো, হলফনামার তথ্য প্রচার ও আসনভিত্তিকভাবে প্রার্থী পরিচিতি সভা আয়োজন করা। একই সঙ্গে প্রতিটি আসনে তদারককারী নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনি ব্যয়সীমা মেনে চলা নিশ্চিত করা। বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধান আইনে সন্নিবেশন করা। সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের হলফনামা প্রদানে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা। মনোনয়নপত্র ও হলফনামার ইলেকট্রনিক ফাইলিং বাধ্যতামূলক করা এবং হলফনামা ও আয়কর বিবরণী সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার বিধান আইনে যুক্ত করা। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯২ ও ৯৩ ধারায় বর্ণিত দায়মুক্তির বিধান বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া। সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ভোটার-তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ নিরসনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নির্বাচনি হলফনামায় প্রার্থীদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তালিকার সঙ্গে অর্জনকালীন মূল্যসহ বর্তমান বাজারমূল্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করার বিধান করা। হলফনামা যাচাই-বাছাই করে অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের প্রার্থিতা বাতিল করা। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনকে যথাযথ করা। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সব তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভোটার-তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ থাকলে তার কারণ অনুসন্ধান করা।


শেয়ার করুন