২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৬:৩০:০৫ অপরাহ্ন
‘সুবিধাভোগী’ প্রশাসন নিয়ে বেকায়দায় অন্তর্বর্তী সরকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২৪
‘সুবিধাভোগী’ প্রশাসন নিয়ে বেকায়দায় অন্তর্বর্তী সরকার

গত দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে জনপ্রশাসনে অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিব পদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা দুই গুণ ছাড়িয়ে গেছে।


এতে অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের বেতন-ভাড়া বাবদ একদিকে প্রশাসনিক ব্যয় যেমন হু হু করে বেড়েছে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি দেওয়ায় বাকি কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।


গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা সামনে আসতে শুরু করেছেন। পদোন্নতি-পদায়নের দাবিতে অনেকে বিক্ষোভ করছেন, এমনকী বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে।


একই সঙ্গে, শেখ হাসিনার সরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তাদের সরিয়ে সেখানে নতুন মুখ আনতেও দেখা যাচ্ছে। ফলে মাথাভারী প্রশাসনের মাথা আগামীতে আরও ভারী হতে যাচ্ছে কী-না, সেই প্রশ্নও উঠছে।


এর মধ্যেই আবার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধা পাওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নতুন সরকারকে সহযোগিতা করছেন না। সব মিলিয়ে ক্ষমতা বদলের দেড় মাস পরেও প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা ও সরকারি কাজে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে, যা নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার।


কাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন অনেকটা ‘পিরামিডে’র মতো হওয়ার কথা বলে জানাচ্ছেন সাবেক আমলারা।


‘অর্থাৎ প্রশাসনের মাথার দিকে জনবল কম থাকবে এবং নিচের দিকে বেশি থাকবে, যা দেখতে অনেকটা মিশরের পিরামিডের মতো,’ বলছিলেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান।


অথচ এখন সেটির উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির (জিইএমএস) তথ্যানুসারে, জনপ্রশাসনে নিয়মিত সচিবের পদ সংখ্যা ৬০টি। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সেটি বাড়তে বাড়তে ৮২টিতে উন্নিত হয়।


অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পর আগের অনেক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি-ও করা হয়েছে কিছু কর্মকর্তাকে। এতে সচিবের সংখ্যা কিছুটা কমে এখন ৭৪টিতে নেমে এসেছে।


অন্যদিকে, জনপ্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২১২টি রাখা হলেও এখন কাজ করছেন দ্বিগুণেরও বেশি কর্মকর্তা। সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির (জিইএমএস) হিসেবে, বর্তমানে কর্মরত অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা প্রায় ৫৪৬ জন। এছাড়া একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে যুগ্ম-সচিব পদটির ক্ষেত্রেও। সরকার অনুমোদিত ৫০২টি পদের বিপরীতে প্রশাসনে এখন যুগ্ম-সচিব হিসেবে কাজ করছেন প্রায় ১ হাজার ১৪৭ জন।


‘অতিরিক্ত এসব কর্মকর্তার কারণে প্রশাসনে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। ফলে কাজ-কর্ম যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না,’ বলেন সাবেক আমলা আবু আলম মো. শহীদ খান।


শেয়ার করুন