দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ভাইরাসটির ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন দুই সাব ভ্যারিয়েন্ট ‘বিএ.৪’ এবং ‘বিএ.৫’-এর জন্য দায়ী বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি)। এসব সাব-ভ্যারিয়েন্ট উচ্চ সংক্রামক হলেও মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির হার কম বলে জানিয়েছে গবেষণা কেন্দ্রটি।
মঙ্গলবার আইসিডিডিআর’বি অফিসিয়াল সাইটে এ তথ্য জানিয়েছে। নতুন আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণে এ তথ্য জানা গেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সাব-ভ্যারিয়েন্ট ‘বিএ.৪’ এবং ‘বিএ.৫’ আগের সাব ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে। এর ফলে দেশে সংক্রমণের নতুন ঢেউ দেখা দিয়েছে। এ সাব-ভ্যারিয়েন্ট দুইটি সর্বপ্রথম যথাক্রমে ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিল। তবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা যাচ্ছে নতুন সাব-ভেরিয়েন্টগুলো আগেরগুলোর তুলনায় কম হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু ঘটায়।
পর্যবেক্ষণের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয় ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর। প্রাথমিকভাবে, বেশিরভাগ করোনা পজিটিভ কেস ছিল ‘বিএ.১’ (জানুয়ারি ২০২২ এর প্রথম দুই সপ্তাহে)। পরে সাবভেরিয়েন্ট ‘বিএ.২’ ২০২২ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমিত হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘বিএ.১’ প্রতিস্থাপন করে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ ঘটায়। এ বছরের ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ মে এর মধ্যে, খুব কম করোনা শনাক্তের হার এবং পজিটিভ নমুনার উচ্চ সিটি মানের কারণে কোনো সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব হয়নি।
এ অবস্থায় গত ১৯ মে ঢাকায় প্রথম সন্দেহভাজন ওমিক্রন সাবভেরিয়েন্ট ‘বিএ.৫’ রোগী শনাক্ত করা হয়। গত ছয় সপ্তাহে (১৪ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত) ‘বিএ.৫’ সবচেয়ে প্রভাবশালী সাবভেরিয়েন্ট হয়ে উঠেছে। এই সময়ের মধ্যে, সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করে ৫২টি করোনা পজিটিভের ঘটনায় মধ্যে ৫১টি ‘বিএ.৫’ সাবভেরিয়েন্ট এবং একটি ‘বিএ.২’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
এ সংক্রান্ত একটি গ্রাফে দেখা যায়, কীভাবে সার্স-কোভ-২ ভেরিয়েন্টগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন ভেরিয়েন্টের উত্থানের চিত্র দেখা যায়। ৪০ জন ‘বিএ.৫’ সংক্রামিত রোগীদের ক্লিনিক্যাল ডাটা এবং টিকাদানের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সংক্রমিতদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী রয়েছেন। তদের ৩৯ জনের মধ্যে করোনার মৃদু উপসর্গ দেখা গেছে এবং একজনের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। তাদের মধ্যে মাত্র একজনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। এদের মধ্যে ১১ জন দ্বিতীয়বারের মতো এবং সাতজন তৃতীয়বারের মতো করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল।
আক্রান্তদের ভ্যাকসিনেশনের ইতিহাসে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৩৮ জন অন্তত করোনার একডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ১৬ জন করোনার বুস্টার বা তিনটি ডোজ গ্রহণ করেছেন। ২১ জন দুই ডোজ টিকা এবং একজন এক ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। তাদের কারো কোনো ভ্রমণ ইতিহাস পাওয়া যায়নি।
পর্যবেক্ষণের উপসংহারে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা জনসংখ্যার মধ্যে ওমিক্রণ ‘বিএ.৫’ সাবভেরিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে রোগের তীব্রতা কম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমানোর জন্য জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে আইসিডিডিআর’বি। একইসঙ্গে করোনার টিকা গ্রহণ, মাস্ক পড়া, সামাজিত দুরত্ব বজায় রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।