২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ০২:২৪:২৩ অপরাহ্ন
আইসিটি খাতের মাফিয়া ছিলেন পলক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১০-২০২৪
আইসিটি খাতের মাফিয়া ছিলেন পলক

সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আইসিটি খাতে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। আইসিটি খাতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, নিয়োগ বাণিজ্য আর বিশেষ বরাদ্দ টি-আর, কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পের নামে অর্থ লুটেছেন। ওই অর্থে নিজ এলাকা নাটোরের সিংড়ায় নামে-বেনামে গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি। আইসিটি খাতের মাফিয়া হয়ে যান তিনি। এছাড়া রাজধানী ঢাকা এবং দেশের বাইরেও রয়েছে তার বিপুল সম্পদ।


শুধু তাই নয়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই এলাকায় ফাইভ স্টার বাহিনী গড়ে তুলেও সমালোচনার মুখে পড়েন পলক। আবার সরকারের বিদায়ঘণ্টার আগমুহূর্তে শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলকে উপজেলা পরিষদের একক চেয়ারম্যান প্রার্থী করতে নানা নাটকের জন্ম দেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ওরফে পাশাকে অপহরণের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলে জনগণের তোপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে দেশের বাইরে পালাতে সহযোগিতা করেন।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব উপস্থিতি এবং মুখে মিষ্টি কথার ফাঁকে ছিল পলকের নানা ছলনা। তার পিএস, এপিএস ও পিএ (ব্যক্তিগত সহকারী) পর্যন্ত রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। তারাও গড়েছেন বিপুল সম্পদ ও অট্টালিকা। এর মধ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি মাদ্রাসার শিক্ষকতা ছেড়ে পলকের ব্যক্তিগত সহকারী নিযুক্ত হন। স্কুল-কলেজের নিয়োগ বাণিজ্য ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে তার ছিল একক আধিপত্য। আরেক ব্যক্তিগত সহকারী রাকিবুল ইসলাম। পলকের আইসিটি দপ্তরের সব কার্যক্রম তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। দপ্তরের সব প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও সাধারণ মানুষকে প্রতারণার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন (ইডিসি) প্রকল্পে সারা দেশে পাঁচ শতাধিক কর্মী নিয়োগে ব্যাপক বাণিজ্য করেন তিনি। আরও দুই ব্যক্তিগত সহকারীর মধ্যে রণজিত কুমার ও সাদ্দাম হোসেন একইভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সরকার পতনের পর জনরোষে সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।


বাবার রাজনীতির সূত্র ধরে পলকের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ। পরে একসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। ২০০৮ সালে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে দেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। হলফনামা অনুযায়ী প্রথম নির্বাচনে তিনি প্রায় সব টাকা ব্যয় করেন ধারদেনা করে। তখন তার মাত্র এক বিঘা কৃষিজমি আর ১৮ শতাংশ ভিটা জমি ছিল। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সিংড়ার এই আসন থেকে সংসদ-সদস্য হন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় পলকের। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামায় পলক ও তার স্ত্রীর নামে অনেক টাকা, বাড়ি, গাড়ি ও বৈধ অস্ত্রের তথ্য উঠে আসে। স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকা শুধু শিক্ষকতা করেই কোটি কোটি টাকা ও অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান, যা পুরোপুরি ‘অবাস্তব’ বলছেন এলাকার লোকজন।


শেয়ার করুন