০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০১:০৭:২০ পূর্বাহ্ন
দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া সম্পদ ফেরাতে না পারলে কীসের বিপ্লব: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৪
দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া সম্পদ ফেরাতে না পারলে কীসের বিপ্লব: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের যে পাহাড় গড়ে উঠেছে সেখান থেকে জনগণের সম্পদ ফিরিয়ে নিতে না পারলে কীসের বিপ্লব হলো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে, এগুলো কেন বাজেয়াপ্ত হলো না? এ সম্পদ কোথায় গেল? এই সম্পদ কেন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার অধিগ্রহণ করল না। লুণ্ঠনকারী যাদের ব্যাংক ঋণ আছে সেগুলো সমন্বয়ের জন্য তাদের সম্পত্তি কেন দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ করা হলো না। এমন পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এটি করা গেলে আমি নিশ্চিত মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ বাড়বে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। ইআরএফ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড)-এর যৌথ আয়োজনে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাজেটের উন্মুক্ততা নিয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।


আর্থিক খাতসহ নানা বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ আছে তবে কেন যেন উদ্বেগটা কাটছে না, এর কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে তার ফল আসছে না, মানুষ অত ধৈর্য রাখতে পারছে না। কিংবা আস্থার সংকট হচ্ছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালীন ইআরএফের এক অনুষ্ঠানে এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন ‘ডাল মে কুচ কালা হে’। এই উদ্ধৃতি গতকাল আবারও উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী রবিবার বলতে পারব কোন কোন ডাল পচা, আর কোন কোন ডাল ভালো ছিল। রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হবে। পরদিন সংবাদ সম্মেলনে জনগণের জন্য গত সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের দুটি ফুসফুস ব্যাংক ও জ্বালানি খাত। এই দুই খাতে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে বেশি লুটপাট হয়েছে। এসব তুলে ধরা হবে প্রতিবেদনে। তাছাড়া কর কাঠামো পরিবর্তন করে কিছু গোষ্ঠীকে কীভাবে সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে সেসব বিষয়গুলো বিস্তারিত থাকবে।


দুর্নীতি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, সাধারণ মানুষের যে ধারণা আছে তার চেয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো জটিল। এমন একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোন উত্তরাধিকার সরকারের করার কিছু থাকে না। ব্যাংকিং খাতে সমস্যা বেশি ছিল। তাত্ক্ষণিক দূর করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যতটা উত্সাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, তা যদি সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে না পারে তবে দেশের মানুষকে ততটাই হতাশ করা হবে। এজন্য বছর শেষে সরকারকে পাঁচ মাসের মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে হবে। কি কি সরকারের দিক থেকে করা হয়েছে। এগুলো একত্রিত করে প্রকাশ করতে হবে। বাজেটের আগে চলমান পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাসের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয়, রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক খাতের ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা জানতে চায় বর্তমান সরকার তাদের সঙ্গে কী ধরনের উন্নয়ন কৌশলে এগুবে। এজন্য ‘ফোরাম ফর ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট’- এর আয়োজন করার সুপারিশ করেন তিনি। আগামী জানুয়ারিতে এ ধরনের উন্নয়ন ফোরাম আয়োজন করতে পারলে আগামী বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে। দেবপ্রিয় বলেন, আর্থিক স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সংস্কার করা কঠিন হবে। 


অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এমনভাবে রেখে গেছে তার খেসারত আমরা গুনছি। বেপরোয়া অনেক নীতি নিয়ে ছিল। ফলে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট ও চুরি বন্ধ হয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ও রপ্তানি বেড়েছে। বর্তমানে  নেওয়া নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সাড়া দেখতে পাচ্ছি। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে। কারণ আগামী ছয় মাস অত্যন্ত কঠিন সময় যাবে। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ না বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।     


‘ওপেন বাজেট সার্ভে রেজাল্ট’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল তুলে ধরে র‍্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, সরকারের ব্যয় স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে কিনা। জনগণ খুবই কম জানতে পারছে। জরিপের ফল তুলে ধরে বলেন, বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতা ৩৭ শতাংশ। যা যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছে। কেবল পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বাজেটে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ১১ শতাংশ আর বাজেট বাস্তবায়ন তদারকি হচ্ছে ৩৭ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল কবির বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এটা কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায় তার চেষ্টা করা হবে। জরিপে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে তা নিয়ে কাজ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে আরো বক্তব্য দেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।


শেয়ার করুন