বিএনপি ছাড়াও কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আগামী ত্রয়েদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা চাইছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত নির্বাচনের দিন-তারিখ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ আগামী বছর নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন।
সর্বশেষ গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত এক সম্মেলনে অংশ নিয়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘আমাদের এই সরকার খুবই স্বল্পকালীন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগামী বছরেই আমরা একটি রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখব। জানি না কী হবে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জোর দেয়। তবে বিএনপি দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দাবি করে আসছে। জামায়াতে ইসলামী শুরুতে নির্বাচনের তাগিদ না দিলেও গত কয়েক দিনে দলটির আমির শফিকুর রহমান দুবার দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের কথা বলেছেন।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যরা বরাবরই বলে আসছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন হবে। তবে সংস্কার কতটুকু হবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর।
রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্র বলছে, নির্বাচন কবে হবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না এলেও বিষয়টি এখন সব মহলে আলোচিত। হয়তো সামনের দিনগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে একটা সময়সীমা পাওয়া যাবে।
গত ২১ নভেম্বর অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের প্রশ্নে এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে ৩১ অক্টোবর সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির প্রস্তাবিত নাম থেকেই নতুন ইসি গঠন করা হয়।
গত ১৭ নভেম্বর সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারকাজ শেষ করেই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তবে নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে, সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যেতে যেতে অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে—এটা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আসলে সংস্কারকাজের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সংস্কার কতটুকু করা হবে, এর ওপরই নির্বাচন কবে হবে তা নির্ভর করছে।
নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান, দুর্নীতি দমনসহ ১০টি বিষয়ে সংস্কারের জন্য সরকার কমিশন গঠন করেছে। বেশির ভাগ কমিশন চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশ দিতে পারে। আর সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে সরকার।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কোন কোন খাতে কী কী সংস্কার করা হবে, তা ঠিক করা হবে। সংস্কারের জন্য কত সময় লাগবে, সেই সময়সীমারও ধারণা পাওয়া যাবে। তখনই আসলে নির্বাচন কবে সম্ভব এর একটা প্রকৃত সময় জানা যাবে।
সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে গত ১৯ নভেম্বর আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমরা অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেব। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না—নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই।’
এরপর ২১ নভেম্বর যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে সরকারের নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি কাঙ্ক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারণার কথা জানান। সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।