১৯ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ০৩:৫৬:৪৫ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীতে ৬৪টি পানের দাম এখন মাত্র ৪ টাকা
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৫
রাজশাহীতে ৬৪টি পানের দাম এখন মাত্র ৪ টাকা

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি বাজারে পানপাতা বাছাই করছিলেন কৃষক এনামুল হক। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বাজারে প্রতি বিড়া (আঁটি) পান চার টাকা দামে বিক্রি করেন। উপজেলার বাকশিমইল ইউনিয়নের খাড়ইল গ্রামের এই কৃষক দুই বিঘা জমিতে পান চাষ করেছেন। কিন্তু পান বিক্রি করে এখন শ্রমিকের খরচই তুলতে পারছেন না বলে জানান।

এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন শ্রমিক বরজ থেকে সর্বোচ্চ তিন পোয়া পান তুলতে পারেন। সেগুলো গুছিয়ে হাটে আনতে অনেক খরচ। শুধু শ্রমিকের খরচই পড়ে ৬০০ টাকা। এখন তিন পোয়া পান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। পানে এখন শুধুই লস আর লস। ’

পানচাষীরা জানান, রাজশাহীতে এক বিড়ায় পান থাকে ৬৪টি। আর ৩২ বিড়াতে হয় এক পোয়া পান। হাটবাজারে বিড়া ও পোয়া—দুইভাবেই পাইকারি বাজারে পান বিক্রি হয়।


এনামুল যে পান বাজারে এনেছেন, এটি আকারে ছোট। মৌগাছি বাজারে বড় পানপাতার প্রতি বিড়া বিক্রি হয় ৩০ টাকা পর্যন্ত। অথচ ১৫ দিন আগেও ১ বিড়া বড় পান সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তখন সর্বনিম্ন বিড়াও ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

মোহনপুরের মদনহাটি গ্রামের পানচাষী আলতাব হোসেন বলেন, ‘বুধবার ১০ থেকে ১২ টাকা বিড়া দরে পান বিক্রি করেছি। আজ (বৃহস্পতিবার) দামই করছে না কেউ। এবার ঈদের আগে খরায় পানে চিনিপোকা ধরেছিল। তারপর বৃষ্টি হওয়ায় ওই পোকা চলে গেছে। এখন গাছে শুধু পান আর পান। কিন্তু দাম নেই। ’

পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের শুভিপাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান প্রায় এক বিঘা জমিতে পান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এবার পান ভালো হয়েছে। কিন্তু পান ভালো হলে কী হবে, প্রতি বিড়া এখন ১০–১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম এমন থাকলে চাষবাষের খরচ উঠবে না।

মৌগাছি বাজারে ৩০ বছর ধরে পানের ব্যবসা করেন মো. আয়েজ উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে কিছু পান দেখিয়ে বলেন, এই পানই বাজারের সবচেয়ে ভালো। অথচ এই পান বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিড়া। ১৫ দিন আগেও প্রতি বিড়া পান ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মো. ইসমাঈল ব্যাপারী নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বুধবার যে পান ১৪ টাকায় বিড়া কিনেছি। সেটা আজ (বৃহস্পতিবার) ৫ টাকা। তারপরও পান কিনি নাই। কারণ, বুধবার ঢাকায় পাঠানো পান বিক্রি হয়নি। চাহিদা না থাকলে পান কিনে কী করব? ’ পানের দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত, এখন ভরা মৌসুম, সরবরাহ বেশি। দ্বিতীয়ত, পান খায় গরিব মানুষ। বাজারে সুপারির দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা পান কম খাচ্ছে। দুটি মিলিয়ে দাম কম। তবে গত পাঁচ–সাত বছরের মধ্যে দাম এত কমেনি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জেলার ৯টি উপজেলায় ৪ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৬৮১ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৭৭ হাজার ২২০ মেট্রিক টন।

গত বছর ৩১ আগস্ট ‘রাজশাহীর মিষ্টি পান’ জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়। রাজশাহীতে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার পান কেনাবেচা হয়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, জুন-সেপ্টেম্বর তিন মাসে সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হয়। ফলে এ সময়ে দাম কমে যায়। তবে এবার অধিক বৃষ্টি এবং খাওয়ার অন্য উপকরণের দাম বাড়ায় দাম কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দামে পান বিক্রি হয়। এ সময়ে প্রতি বিড়া পান সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। আর বছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গড়ে ১০০ টাকা দরে প্রতি বিড়া পান বিক্রি হয়। সুতরাং কৃষক পান বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এটা বলা যাবে না।

শেয়ার করুন