ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সাহেদুল আজম তমাল।
এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এ রিট দায়ের করেন। রিটের পক্ষে আইনজীবী হলেন ব্যারিস্টার সাহেদুল আজম।
রিটে অভিযোগের অনুসন্ধানের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, টিউলিপ সিদ্দিক ও তারেক আহমেদ সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্ট ১৪ জনকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়েছে।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ১৯ আগস্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শেখ হাসিনা পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নী টিউলিপ সিদ্দিক মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) লোপাট করেছেন।
‘আউস্টেড বাংলাদেশ’স প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা, হার সান সজীব ওয়াজেদ জয় অ্যান্ড নিস টিউলিপ সিদ্দিক এমবেজেলড ৫ বিলিয়ন ডলার্স ফ্রম ওভারপ্রাইজড ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার্স রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট থ্রু মালয়েশিয়ান ব্যাংকস’ শিরোনামে গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাশিয়ার রোসাটম মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এ অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছে। এতে মধ্যস্থতা করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। শেখ হাসিনা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র অদূর ভবিষ্যতে দেশের বিদ্যুতের ২০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি ভিভিইআর ইউনিট ব্যবহার করে ২০২৪ সালের মধ্যে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি অবশ্যই বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। গণমাধ্যমে এমন ইতিবাচক প্রচারণার আড়ালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন (রোসাটম) থেকে সোভিয়েত আমলের পারমাণবিক চুল্লি কেনার জন্য ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ লোপাট করেছেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এর নির্মাণব্যয় তুলনামূলকভাবে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে গোপনে পাঁচ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে রাশিয়া। মালয়েশিয়ার ওইসব ব্যাংকে রাশিয়ার বিশেষ তহবিল থেকে এ অর্থ এসেছে।