সরকারের নির্দেশনা মতো এলাকা ভেদে লোডশেডিয়ের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয় । সেই নির্দেশনায় সকাল ৯ টা থেকে রাত্রি ১১ টা পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় দৈনিক এক ঘন্টা করে লোডশেডিয়ের কথা বলা হয় । সেই অনুসারে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লি: (নেসকো) এলাকা অনুসারে কখন কোথায় লোডশেডিং হবে তার চিত্র তুলে ধরে সোমবার তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ।
তবে প্রথম দিনেই পূর্বনির্ধারিত সেই সময়ের বাইরেও দীর্ঘ সময় রাজশাহীতে দেখা মিলছে লোডশেডিং। আর এর জন্য নেসকো কর্তৃপক্ষ দায়ী করছেন স্থানীয় ট্রান্সমিশন বা গ্রিড অফিসকে ।
এদিকে প্রথম দিনেই এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, অভিভাবক সহ সকল পর্যায়ের নাগরিক ।
নেসকোর প্রকাশিত তথ্যে প্রতিটি এলাকায় দিনে এক ঘন্টা খুব লোডশেডিয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও সারা দিনে প্রতিটি এলাকায় ৩ থেকে ৫ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ বা লোডশেডিং হতে দেখা গেছে।
আর এজন্য নাগরিকেরা বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন। নেসকো’র দেয়া তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগের তাদের গ্রহকের সংখ্যা ১৭ লাখ । এর বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ৪৭০ মেগাওয়াট (গড় হিসেব)। তবে এই চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি রয়েছে গড়ে ৬০ করে মেগাওয়াট। ৪৭০ মেগাওয়াট এর মধ্যে ও রাজশাহী মহানগরীতেই বিদ্যুতের চাহিদা থাকে গড়ে ১১০ মেগাওয়াট।
এদিকে রাজশাহী মহানগর ও জেলায় তাদের গ্রাহকদের এলাকা ভেদে এক ঘন্টা করে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেয়া হয়েছে । তবে মঙ্গলবার থেকে নির্ধারন করে দেয়া সময়ের বাইরেও গ্রাহকদের অধিক সময় এ লোডশেডিয়ের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
রাজশাহী মহানগীরসহ বিভিন্ন উপজেলার নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও সাংবাদিকদের ফোন করে অভিযোগ করেন, সরকার লোডশেডিং এর জন্য সময় নির্ধারণ করে দিলেও যখন খুশি যতক্ষণ ইচ্ছে বিদ্যুৎ টেনে রাখছে। এতে করে লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কাজে অসুবিধা হচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার আব্দুর নূর নামে একজন জানান, রাত ১২ থেকে শুরু করে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ টেনে রেখেছে। সরকারের এতো উন্নয়ন হলে আজ কি অবস্থা তা বোঝায় যায়।
এদিকে রাজশাহী নগরবাসী জানান, বিদ্যুৎ ঠিকমত না থাকায় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। সামনে যেসব এসএসসি, এইচএসসি ও এ্যাডমিশন পরীক্ষার্থী আছে তাদের ঠিকমত লেখাপড়া হচ্ছে না। লোডশেডিং এর জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। এছাড়াও বাড়ীর বৃদ্ধ ও শিশুরা গরমে নাজেহাল হয়ে পড়ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বিদ্যুৎ সরকার রাত ৮ টার মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা তা পালন করব। তবে দিনে ঠিকমত বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা ঠিকমত দোকানে আসছে না। রাজশাহী অঞ্চলে এমনিতেই প্রচুর গরম তার পরও বিদ্যুৎ এর বিপর্যয় সবমিলিয়ে কঠিন অবস্থা পার করছি আমরা।
বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ের বেশী ক্ষোভ প্রকাশ করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তারা সেখানে সরকার ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোকে নানান মন্তব্য লিখে তুলোধুনা করছেন।
নেসকো সার্কেল-১ এর অধিনের এলাকা রাজশাহী মহানগরী ও তানোর উপজেলা মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯০ থেকে মধ্যে ১২০ মেগাওয়াটের মধ্যে। মঙ্গলবার দিনের বেলা এই চাহিদা ছিল ৯৫ মেগাওয়াট।
যার বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ২৫ মেগাওয়াট। এদিন এক পর্যায়ে বিদ্যুতের দিয়ে এই ঘাটতি গিয়ে ঠেকে ৪৬ মেগাওয়াটে। যা মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ ।
নেসকোর পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিরিন ইয়াসমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জনারেশন, ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন এই তিন ধাপ পেরিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের দোড়গোড়ায় এসে পৌঁছায়। লোডশেডিয়ের বিষয়ে কাজ করে থাকে ট্রান্সমিশন বিভাগ । নেসকো ডিস্ট্রিবিউশনের কাজটি করে থাকে।
সময় নির্ধারণ করে দিয়ে লোডশেডিয়েরপরিকল্পনাটি মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে। আমাদেরকে বলা হয়েছে শিডিউল করে গ্রিডে পাঠাতে। আমরা বিদ্যুতের চাহিদা দিয়েছি এবং লোডশেডিয়ের শিডিউল করে তা গ্রিডে পাঠিয়েছি এবং গ্রাহকদের সুবিধার্থে নেসকোর ওয়েব সাইটেও দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি লোডশেডিং যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং মানুষ যেন লোডশেডিয়ের শিডিউলটা জানতে পারে ও সে অনুপাতে তারা তাদের কজগুলো সেরে ফেলতে পারে এবং বিদ্যুত সাশ্রয়ী হতে পারে।
এদিকে লোডশেডিয়ের সিডিউল যে শতভাগ মানা হচ্ছে না তা স্বীকার করে রাজশাহী নেসকো’র প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, যারা লোডশেডিং দিচ্ছেন করা অর্থাৎ স্থানীয় গ্রিড অফিস, তারা এখনো শতভাগ বুঝে উঠতে পারেননি। আমি সংশ্লিষ্ট অফিসে লোক পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কিভাবে লোডশেডিং দিতে হবে। গ্রিড অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন তাদের নির্দেশ দিবে তখন তারা লোডশেডিং এর নির্দেশনাটি শতভাগ মানবে।