ঘোষণাটি আসার কথা ছিল গত মার্চে। এরপর বলা হয় মে মাসে। ইতোমধ্যে অর্থবছরের শেষ মাস জুন শুরু হয়েছে।
তবু নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা এখনো দিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশ্য আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণার লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।
যদি তা সম্ভবও হয়, তবু চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ অর্থে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
কেননা একটি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেটির জনবলকে এমপিও দিতে ৬-৭ মাসের দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এই অবস্থায় এ খাতে চলতি বছরে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরতই দিতে হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
আরও জানা যায়, নতুন করে এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে প্রায় ২৩০০ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার আবেদন যাচাই করে রোজার আগেই তা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কথা ছিল, ঈদ উপহার হিসাবে রোজার মধ্যেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি সম্ভব হয়নি। কেন হয়নি, এ বিষয়ে কেউই মুখ খুলছেন না। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে ধীরগতির কারণে এমনটি হয়েছে।
সূত্র জানায়, এমপিওভুক্তির বিষয়ে ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নির্দেশনা দেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের যেন অনিয়ম না হয়। তদবিরের পরিবর্তে নীতিমালা অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত শর্ত পূরণ করবে, সেগুলো সবই এমপিওর জন্য নির্বাচন করতে হবে। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে যাচাই-বাছাই কাজ শেষ করে খসড়া তালিকা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তুলে দিতে বলা হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী, এই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক মঙ্গলবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী উপযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেটি চূড়ান্ত করে ঘোষণার জন্য আরও প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। এই অবস্থায় চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ অর্থ ফেরতই যাবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির খাতে বাজেটে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা স্কুল ও কলেজ এবং ৫০ কোটি টাকা মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য। মূলত দুই মাসের এমপিও ধরে এই বরাদ্দ ঠিক করা হয়। সূত্র জানায়, যেহেতু এই অর্থ চলতি বছরে ব্যয় সম্ভব হবে না, সেজন্য নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এই খাতে নতুন বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে নতুন এমপিওর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যাবে বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব। তিনি বলেন, এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে অর্থ কোনো সমস্যা হবে না। কেননা প্রয়োজনে এই খাতে আরও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী তিনটি শর্ত পূরণ করলে এমপিওভুক্ত হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে-শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী সংখ্যা এবং পাশের হার। এর আগে প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদের ওপর ২৫ নম্বর ছিল। এবার সেটি আর নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩ ধরনের স্কুল এবং কলেজ এমপিওভুক্তির নীতিমালা করেছে।
সূত্র জানায়, নীতিমালার উল্লিখিত শর্ত পূরণ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম তালিকায় রাখা হয়েছে। পরে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমেও তথ্য আনা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের বাছাইয়ের পর যেগুলো শর্ত পূরণ করেছে, সেগুলোকে খসড়া তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। তবে এর বাইরে বিশেষ বিবেচনায় দুর্গম, হাওড়সহ সুবিধাবঞ্চিত এলাকার প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার পেয়েছে। বিবেচনা পেয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও ইতিহাস। কেননা আগেরবার স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারদের নামে প্রতিষ্ঠিত বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার পর মাঠপর্যায় থেকে বিরোধিতা এসেছিল। পরে চাপের মুখে সেগুলো তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে। এবার যাতে তেমনটির পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেদিকে আগেভাগেই লক্ষ রাখা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ২৭৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে অবশ্য চূড়ান্ত বাছাইয়ে ২ হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ছাড়পত্র পায়। এরও পরে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতাবলে ওই বছরের ১২ নভেম্বর ছয়টি এবং ১৪ নভেম্বর একটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। আর প্রথমে তালিকাভুক্তগুলো থেকে বাদ পড়া ১০১৫টির বেশির ভাগই ছিল অযোগ্য এবং তখনকার এমপিও নীতিমালার বিভিন্ন শর্তপূরণ করেনি।