যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ‘বাস্তব ও ন্যায্য’ চুক্তির আহ্বান জানিয়েছে ইরান। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির একজন উপদেষ্টা শুক্রবার এমন মন্তব্য করেছেন। আজ শনিবার ওমানে অনুষ্ঠেয় আলোচনাকে সামনে রেখে এই বক্তব্য সামনে এসেছে, যেখানে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উত্তেজনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশ তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে খামেনিকে একটি চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি আলোচনার আহ্বান জানান—তবে সতর্ক করে দেন, আলোচনায় ইরান সাড়া না দিলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি ‘এক্স’-এ এক পোস্টে বলেন, ‘ক্যামেরার সামনে শুধু দেখানোর মতো কথাবার্তা বলার বদলে তেহরান একটি বাস্তব ও ন্যায্য চুক্তি চায়। গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব প্রস্তুত রয়েছে।’
তিনি জানান, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনার জন্য পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে’ ওমান যাচ্ছেন। শামখানি আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র সদিচ্ছা দেখালে আলোচনা সহজ হবে।
আলোচনার আগ মুহূর্তে ট্রাম্প আবারও বলেন, আলোচনায় ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপ ‘অবশ্যই’ একটি বিকল্প। এর জবাবে ইরান জানায়, তারা জাতিসংঘের পারমাণবিক পরিদর্শকদের বহিষ্কারের চিন্তা করছে। এ মন্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্র ‘উস্কানিমূলক’ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে।
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে না।
শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেন, ‘ইরান সততা ও সম্পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে কূটনীতিকে একটি বাস্তব সুযোগ দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো, যা তারা বৈরী বক্তব্য সত্ত্বেও গ্রহণ করেছে।’
এই আলোচনার ঘোষণা প্রথম দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের সময়। তখন ট্রাম্প বলেন, আলোচনাগুলো হবে উচ্চ পর্যায়ের এবং ‘সরাসরি’। কিন্তু ইরান বলছে, এটি হবে ‘পরোক্ষ’।
ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ‘এই আলোচনা টেক্সট আদান-প্রদানের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পরিচালিত হবে।’ যদিও তারা কোনো সূত্রের নাম উল্লেখ করেনি।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট শুক্রবার বলেন, আলোচনাগুলো সরাসরি হবে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কূটনীতিতে বিশ্বাস করেন, এবং এক কক্ষে বসে সরাসরি কথা বলাতেই তিনি আস্থা রাখেন।’
এই আলোচনায় ইরানের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন আব্বাস আরাগচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে থাকবেন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। আলোচনার স্থান ওমান, যা ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ইস্যুতে অতীতেও মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করেছে।
এদিকে শুক্রবার উইটকফ রাশিয়া সফর করেন এবং সেখানকার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার মস্কোতে রাশিয়া, চীন ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।