ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীত্বের লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেন? বরিস জনসনের উত্তরসূরী হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আরও এগিয়ে গেলেন লিজ ট্রাস। ফলাফল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশে।
শুক্রবার বেটিং কোম্পানি এসমার্কেটসের তথ্যের ভিত্তিতে এ কথা জানিয়েছে মার্কিন সংবাদামধ্যম ব্লুমবার্গ।
বেশ কয়েক মাস ধরেই নিজের চেয়ার নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। করোনাকালে পার্টিগেট কেলেঙ্কারির কারণে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হন তিনি। তবে সে যাত্রায় উতরে যান বরিস।
কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। অল্প কিছুদিন পরই নিজ দলের এক এমপির যৌন কেলেঙ্কারির কারণে তার ওপর খড়গ নেমে আসে। অভিযোগ, বরিস জনসন ওই এমপির যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা জেনেও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি। বরং তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই পদত্যাগ করেন ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ইস্তফা দেন। এর পর পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায় ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে। অবশেষে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভি দলের প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বরিস জনসন। বলেন, নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।
এর পর থেকেই ব্রিটেনে শুরু হয় দলীয় প্রধান নির্বাচনের দৌঁড়। মোট ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আটজন বাদ পড়েছেন। টিকে আছেন কেবল সাবেক অর্থমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
তাদের মধ্যেই একজন নির্বাচিত হবেন কনজারভেটিভ দলের প্রধান। আর যিনি দলীয় প্রধান নির্বাচিত হবেন, তিনিই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উত্তরসূরি।
কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ছয় সপ্তাহব্যাপী উত্তেজনাপূর্ণ এক প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বাকি প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে চূড়ান্ত ধাপে ১ লাখ ৭৫ হাজার কনজারভেটিভ পার্টির তথা টোরি সদস্যের মন জেতার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে এর ফলাফল। অর্থাৎ সেদিনই জানা যাবে, কে হবেন পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এসমার্কেটস বলছে, ঋষি সুনাক এতে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ১০ শতাংশ।
বেটিং কোম্পানিটির রাজনৈতিক বাজার বিভাগের প্রধান ম্যাথিউ শ্যাডিক বলেন, শুরুতে প্রতিযোগিতা যখন দু’জনের মধ্যে নেমে আসে, তখন ফেভারিট হিসেবে ট্রাসকে ৬০-৪০ রেটিং দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিকূলতাগুলো তার পক্ষে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করছিলেন, ঋষি সুনাক ভালো প্রচারক হবেন। কিন্তু ট্রাসের বিতর্কের পারফরম্যান্স সব প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।
সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লিজ ট্রাস। ৫০৭ টোরি সদস্যের ওপর এক জরিপ বলছে, গত সপ্তাহে টেলিভিশন বিতর্কে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী পারফরমার।
অন্যান্য বেটিং সাইটগুলোতেও ঋষির তুলনায় অনেক এগিয়ে লিজ ট্রাস। অডসচেকার বলছে, বেটিং কোম্পানি ল্যাডব্রোকস, প্যাডি পাওয়ার এবং উইলিয়াম হিলে তার পক্ষে বাজির দর এখন ১/৮।
অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ঋষি সুনাকের সরে দাঁড়ানো বরিস জনসন সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল। এতে তার বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় দলের অনেক সদস্যের মধ্যে। বেটিং কোম্পানি স্কাইয়ে এখন ঋষির পক্ষে বাজির দর নেমেছে ৬/১ এ।