০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ০১:৫৫:১৪ পূর্বাহ্ন
“গোল্ডেন ডিপিএস” নামে প্রতারণা, সুদ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৬-২০২৫
“গোল্ডেন ডিপিএস” নামে প্রতারণা, সুদ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পিরোলি সেনোপাড়া গ্রামের একাধিক ভুক্তভোগী ব্যক্তি ‘গোল্ডেন ডিপিএস’ নামক ছদ্মবেশী প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছেন। সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে রাজশাহী নগরীর দারুচিনি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা জানান, সাজেদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি তার পিতা সাইফুল ইসলাম ও শ্বশুর মোজাফফর হোসেনকে সাথে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সাজেদুর রহমান একজন উকিলের মহুরী হলেও নিজেকে “দ্বিতীয় উকিল” পরিচয় দিয়ে নানা প্রলোভন ও চাপে সাধারণ মানুষকে ‘গোল্ডেন ডিপিএস’ প্রকল্পে টাকা জমা দিতে বাধ্য করেন। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রতারণায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০০টি পরিবার লক্ষ লক্ষ টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সজিব জানান, তার বাবা পাঁচ বছর ধরে ডিপিএসে টাকা জমা রেখেছেন, চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর ছিল সাজেদুরের। এখন টাকা ফেরত চাইলে তারা ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। নাইটগার্ড বেলাল জানান, সাজেদুরের শ্বশুর মোজাফফরের বাড়ি পুলিশকে দেখিয়ে দেওয়ার কারণে তাকে মারধর করা হয়েছে এবং এক লাখ টাকা না দিলে মিথ্যা মামলার হুমকি দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, মাত্র ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েও তিনি সুদে-আসলে প্রায় ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন, তারপরও রেহাই পাননি। ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত চলছে।

ব্যবসায়ী সোহাগ অভিযোগ করেন, সাজেদুর তাকে মিথ্যা মামলার বাদী হতে চাপ দেন এবং অর্থ ভাগাভাগির প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় তিনি ব্যবসা বন্ধের হুমকি পান। শিবদেবপাড়ার জাহাঙ্গীর আলম লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার মোটরসাইকেল ও মালামাল জোর করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, গত ১৮ জুন কালিগঞ্জ বাজারে অন্তত ১৫ জন ব্যক্তি প্রকাশ্যে এই প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী সজিব। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর, বেলাল, সোহাগসহ আরও অনেকে।

তারা আরও জানান, রোববার সকালে সাজেদুর ও তার শ্বশুর মোজাফফরের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিজ্ঞ আদালতে মামলা করতে গেলে একটি ভাড়াটে সন্ত্রাসী দল তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। উপস্থিত আইনজীবীর মহুরী এগিয়ে আসায় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা জানান, আইনজীবী মাসুদ সরদারের মহুরী সাজেদুরের নির্দেশেই এই হামলার পরিকল্পনা হয়। এ বিষয়ে রাজশাহী এডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা রাজশাহী জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা রয়েছে, তবে প্রতারক চক্রের দাপটে তারা পরিবারসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে গোল্ডেন ডিপিএস-এর ফিল্ড অফিসার ও আইনজীবীর সহকারী সাজেদুর রহমান জানান, “আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘গোল্ডেন ডিপিএস’-সরকার অনুমোদিত লাইফ ইন্সুরেন্স এবং এর অফিস রাজশাহী নিউমার্কেটের সামনে অবস্থিত। কেউ যদি বৈধভাবে অর্থ জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে সেখানে গেলে প্রক্রিয়া অনুযায়ী টাকা ফেরত পাবেন। আমি নিজেও এই বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।”

তিনি আরও বলেন, “এই সংবাদ সম্মেলনের পেছনে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য আমাকে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা।”

জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাজেদুরের শশুর মোজাফফর জানান, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি আরো বলেন, জাহাঙ্গীরকে আমি ফাঁকা চেক এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ৭৫০০০/- টাকা ঋণ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে বছরে মাত্র একটি কিস্তি দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে কোন টাকা পরিশোধ করে নাই।

শেয়ার করুন