০৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ০৮:০৩:৫৫ অপরাহ্ন
প্রাথমিক বৃত্তি জালিয়াতি: ১০ বছর পর বরখাস্ত রাজশাহীর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২৫
প্রাথমিক বৃত্তি জালিয়াতি: ১০ বছর পর বরখাস্ত রাজশাহীর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা

রাজশাহীতে ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলায় নগরীর বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে সরকারি চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন।


তিনি জানান, রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক একটি মামলাও বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে রাখী চক্রবর্তী বলেন, "এই বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে ইচ্ছুক নই।"


জানা গেছে, গত ২ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে এই বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষর করেন। আদেশটি ৮ জুলাই রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছে।


আদেশে বলা হয়, রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় আনা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৪(৩)(গ) বিধি অনুযায়ী তাঁকে "চাকরি থেকে অপসারণ" গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।


উল্লেখ্য, তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর একই বিধিমালার ৩(খ) ও ৩(ঘ) ধারায় বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় দেওয়া তাঁর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকাকালীন নম্বর ফর্দ, গোপনীয় কাগজপত্র ও কম্পিউটার রাখী চক্রবর্তীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাঁর অনুমতি বা অংশগ্রহণ ছাড়া নম্বর পরিবর্তন বা টেম্পারিং সম্ভব ছিল না।


অভিযোগ থেকে জানা যায়, বোয়ালিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন স্কুলের ৪০ জন শিক্ষার্থীর নম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে তারা বৃত্তি পায়। অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম তদন্ত করে মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।


তিনজনের মধ্যে রাখী চক্রবর্তী চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হন। এর আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে চাকরিতে ফিরে আসেন, তবে পরীক্ষাসংক্রান্ত একটি পৃথক অভিযোগে পরে আবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধেও দুদকের মামলা চলছে। আর কর্মচারী সোনিয়া রওশনকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়; তাঁকে দুদকের মামলার অভিযোগপত্র থেকেও বাদ দেওয়া হয়।


পরবর্তী সময়ে অভিভাবকেরা সংশোধিত ফলাফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নামেন। এর ফলস্বরূপ ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, আগে যেসব শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪০ জনের বৃত্তি বাতিল করা হয়েছে—যার মধ্যে ৩০ জন ট্যালেন্টপুল এবং ১০ জন সাধারণ গ্রেডে ছিল।


সংশোধিত ফলাফলে রাজশাহী নগরীর শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থীর বৃত্তিও বাতিল করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সন্তান পড়াশোনা করত। পরবর্তীতে বৃত্তির অর্থ ট্রেজারির মাধ্যমে ফেরত দিতে বলা হয়।


শেয়ার করুন