২০ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ০৫:৩১:৩২ পূর্বাহ্ন
জামায়াতের সমাবেশের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমুদ্র
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৫
জামায়াতের সমাবেশের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমুদ্র

ঢাকায় কয়েক লাখ নেতাকর্মী সমাগমের লক্ষ্য নিয়ে ‘জাতীয় সমাবেশ’ আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ করেছে জামায়াতে ইসলামী।

শনিবার দুপুর ২টা থেকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে মঞ্চের চারপাশে নেতাকর্মীদের সমাবেশ জনসভায় রূপ নিয়েছে। বেলা ১০টা থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করছে সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী।

মঞ্চ নির্মাণ, অতিথিদের জন্য আসন, বিভিন্ন স্থানে মাইক, বড় পর্দা স্থাপন, উদ্যানজুড়ে জামায়াতের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বসানোর কাজ ভোরের আগেই শেষ হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুই দিকে প্রবেশ পথে তৈরি করা হয়েছে বিশাল গেইট। আর মধ্য রাত থেকেই আসতে শুরু করেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা।


বিশাল মঞ্চে টানানো ব্যানারে রয়েছে জাতীয় সমাবেশ-২০২৫ লেখা, পাশেই স্থান পেয়েছে দলটির প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’। লাল কার্পেট বিচানো হয়েছে মঞ্চে এবং মঞ্চের সামনের দিকে যেখানে অতিথিদের আসন।

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে ৭ দফা দাবিতে এই সমাবেশ করছে জামায়াত। দলটির দাবির মধ্যে রয়েছে- সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারে পূনর্বাসন, সংখ্যানুপাতিক(পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, “এই সমাবেশের মাধ্যমে আমরা দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায্য দাবিগুলো আমরা জাতির কাছে তুলে ধরব। এই সমাবেশে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মী-সমর্থকরা আসছেন।

“আপনি নিশ্চয়ই দেখছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন জনসমুদ্রে রুপ নিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা স্মরণকালের জনসমাগম এই সমাবেশে ঘটবে। উদ্যান ছাড়িয়ে আশপাশেও মানুষের মিছিল আসছেই। ইনশাল্লাহ বেলা ২টায় আমাদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করব।”


এতোদিন জামায়াতে ইসলামী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনের সড়ক, পুরনা পল্টনের মোড়ে সভা-সমাবেশ করলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারই প্রথম সমাবেশ।

জামায়াতের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় বড় সমাবেশের মাধ্যমে তাদের শক্তি-সামর্থ ও জনসমর্থন জানান দেবে। তাদের প্রত্যাশা, সমাবেশ শুরুর আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, মৎস্যভবন সড়কসহ আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হবে।

এ সমাবেশে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’ রাজনৈতিক দলগুলো এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং গত দেড় দশকে জামায়াতে ইসলামীর শহীদ পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

মঞ্চের সামনে দুদিকে আমন্ত্রিত অতিথি, জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য এবং জেলা আমিরদের জন্য আসন সংরক্ষিত আছে।


সমাবেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৩টি এলইডি স্ক্রিন সেট বসানো হয়েছে, যাতে নেতাকর্মীরা সরাসরি বক্তব্য শুনতে পারেন। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ও তার আশপাশে তিন শতাধিক মাইক লাগানো হয়েছে।

সমাবেশস্থলে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নেতারা।

মঞ্চের পূর্ব দিকে সারি সারি অস্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ টয়লেট বসানো হয়েছে। নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খাবার পানির ব্যবস্থার পাশাপাশি কয়েকটি মেডিকেল কেন্দ্র খোলা হয়েছে উদ্যানের ভেতরে।

সারাদেশ থেকে আসা বাস-মাইক্রোবাস পার্কিংয়ের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশ ছাড়াও মতিঝিল, কমলাপুর, কারওয়ান বাজার, পলাশীর মোড়, চানখার পুলসহ ১৩টি স্পট ঠিক করা হয়েছে।


মিছিলের পর মিছিল

সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী অভিমুখে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসছেন। কণ্ঠে স্লোগান তুলছেন- ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’। প্রতিটি মিছিলে এক থেকে দুটি দাঁড়িপাল্লা দেখা গেছে, এর বাইরে কোনো ব্যানার-ফেস্টুন নেই। তবে কর্মী-সমর্থকরা প্রতীক সংবলিত বিভিন্ন রঙের গেঞ্জি পরেছেন। অনেকের হাতে দেখা গেছে জাতীয় পতাকা, কাউকে কাউকে দলীয় পতাকাও বহন করতে দেখা গেছে।

হবিগঞ্জ থেকে আসা সোহরাব খন্দকার বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগেই ঢাকায় পৌঁছে চানখার পুল থেকে আসছি। আমাদের বিশ্বাস, একদিন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে সক্ষম হবে।


“আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারিদিকে তাকিয়ে দেখেন- সেই বার্তাই আমাদেরকে উজ্জীবিত করছে, মাশাল্লাহ।”

নীলফামারী থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা এসেছেন ভোর বেলা। নাস্তা করে মাঠে ঢুকেছেন সকাল ৮টায়।

তাদের একজন আবদুল হাকিম জোয়ার্দার বলেন, “মিছিল করে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে ঢুকে দেখি, আমাদের অনেক আগেই অনেক ভাইয়েরা উপস্থিত হয়েছেন। মঞ্চের সামনে এবং ডানদিকে তখন কোনো স্থান খালি নেই। আমরা বামদিকে গাছের ছায়ায় স্থান পেয়েছি।

“আবহাওয়াটা ভালো মনে হচ্ছে। ফলে ঢাকায় আাসার এই জার্নি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আগামী নির্বাচনের ভোটকে নিয়ে নেতারাদের রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে আমরা ঘরে ফিরে যাব ইনশাল্লাহ।”

শেয়ার করুন