২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০২:১০:০৮ পূর্বাহ্ন
পুকুরপাড়ে পড়েছিলো যুবকের গলাকাটা লাশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৮-২০২২
পুকুরপাড়ে পড়েছিলো যুবকের গলাকাটা লাশ

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুরে গ্রামে যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশটি একটি পুকুর পাড়ে পড়েছিলো।

রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। নিহত যুবকের নাম শাহিন শেখ (২৬)। তিনি একই গ্রামের মস্তফা শেখের ছেলে।

এ ঘটনায় একই গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের ভাই মাইনদ্দিন হাওলাদারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। নিহতের বাবা পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে থাকলেও জীবিত থাকতে ছেলে হত্যার বিচার দেখতে চান।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কেশমতি বাজিতপুর গ্রামে এক যুবকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে নিজ ঘরে ঘুমাতে যান শাহিন। সকালে দরজা খোলা দেখে শাহিনকে খোঁজাখুঁজি করে পরিবারের লোকজন।

প্রথমে পরিবারের লোকজন ধারণা করেছে, হয়তো কোনো প্রয়োজনে শাহিন বাজারে গেছে। বাজারে খুঁজে না পাওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিতে থাকে পরিবারের লোকজন। চাচাতো ভাই মাসুদ শেখ খুঁজতে খুঁজতে ওই গ্রামের গনণউন্নয়ন পুরাতন ভবনের পেছনে একটি পুকুর পাড়ে গেলে সেখানে শাহিনের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান তিনি।

পরে খবর দিলে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মাদারীপুর সদর হাসপালে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় ওই গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হাওলাদারের ভাই মাইনদ্দিন হাওলাদারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। নিহত শাহিন স্নাতক তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর পড়ালোখা চালিয়ে যেতে পারেননি।

নিহতের বাবা মস্তফা শেখ গাছ থেকে পড়ে গেলে হাত পা ভেঙে যায় তার। দীর্ঘদিন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন কিছুদিন হলো। চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তার।

নিজে অসহায় হয়ে পড়েছেন পঙ্গুত্বের কারণে। দুটো ছেলের ওপর নির্ভর করে বাকি জীবন কাটানোর আশা নিয়ে বেঁচে ছিলেন। ছেলের লাশ পুকুর পাড়ে পাওয়ার পর অনেকটাই নির্বাক তিনি।

নিহতের চাচাতো ভাই মাসুদ শেখ জানান, শাহিন যে ঘরে ঘুমানো ছিল সে ঘরের দরজা সকালে খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করি। প্রথমে ভাবছি হয়তো বাজারে গেছে। বাজারেও না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে গণউন্নয়নের পুরোনো ভবনের পেছনে শাহিনের রক্তাক্ত অবস্থায় পাই। পরে পুলিশকে খবর দেই।

নিহতের বড় ভাই সোহাগ শেখ বলেন, তিনি ঢাকায় থেকে কাজ করেন। সকালে খবর পাই ছোট ভাইয়ের রক্তাক্ত লাশের। কষ্টে কষ্টে তার জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে যায় তার বাবার।

পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে এখন বাড়িতে প্রায় পঙ্গু অবস্থায় শুয়ে থাকেন। ছোট ভাইকে বাড়িতে রেখেছিল শুধু বাবা-মাকে দেখে রাখতে। ছোট ভাইটাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের বিচার চাই।

নিহতের বাবা মস্তফা শেখ বলেন, ‘আর কিছু রইল না। হাত-পা ভেঙে পঙ্গু হয়েও এত কষ্ট পাননি তিনি। আজ ছেলের রক্তাক্ত লাশ দেখে সব স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে তার। তার ছেলেকে সিরাজুল চেয়ারম্যানের ভাই মাইনদ্দিন ও সেলিম হাওলাদার হত্যা করেছেন। পঙ্গু হলেও জীবিত থাকতে ছেলের হত্যার বিচার দেখতে চান তিনি।’

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, বাজিতপুরে এক যুবকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।

শেয়ার করুন