০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৩:১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
প্রতারকের কোটি টাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ভাগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১১-২০২৩
প্রতারকের কোটি টাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ভাগ

প্রতারকের কাছে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা খুইয়ে পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী গুলশান থানায় মামলা করেন। তবে পুলিশ সেই টাকা উদ্ধার না করে উল্টো আসামির সঙ্গে যোগসাজশে তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলতে সহযোগিতা করেছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতারণা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম ওই টাকায় ভাগও বসিয়েছেন।  ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নাজির হোসেন পরে পুলিশ সদর দপ্তরে দাখিল করা অভিযোগে এমন দাবি করেছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সেই অভিযোগটি তদন্ত করছে। সিআইডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


সূত্রমতে, পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী নাজির হোসেন ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় মুহাম্মদ এনামুল হাসান জিহাদ ও তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা ওরফে সাদিয়া জান্নাতসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের একটি মামলা করেছিলেন। মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম। বছরখানেক পর তিনি বদলি হয়ে যান। নাজির হোসেন অপর তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারেন, আসামির ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা থাকলেও শরীফুল ইসলাম হিসাবটি ফ্রিজ না করে উল্টো সেখান থেকে টাকা তুলে নিতে সহায়তা করেন এবং নিজেও টাকার ভাগ নেন। ক্ষুব্ধ নাজির হোসেন গত ২৪ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে পরিদর্শক শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগটি তদন্ত করছে সিআইডি সদর দপ্তর।


পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আসামির পক্ষ নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার বাদী এত টাকা কোথায় পেলেন? তাঁর টাকার উৎস কী?’


জানা যায়, শরীফের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাজির হোসেনের অভিযোগটি তদন্ত করছেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান। মো. আজাদ রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।


সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, শরীফ বদলি হওয়ার পর নাজির হোসেনের করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান যথাক্রমে পরিদর্শক শেখ মো. রোকোনুজ্জামান ও মো. রেজাউল করিম। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, আসামির ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা আছে জানার পরও প্রথম দুই তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবটি ফ্রিজ করার উদ্যোগ নেননি। আসামি সেই সুযোগে হিসাব থেকে কোটি টাকা সরিয়ে ফেলেন। তা থেকে ৯০ লাখ টাকা পরিদর্শক শরীফুল নিয়েছেন বলে নাজির হোসেনের অভিযোগ।


তবে পুলিশ পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘নাজির হোসেন আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে এই অভিযোগ করেছেন। তিনি আমার কাছ থেকে টাকা নিতে চান।’


নাজির হোসেন গুলশান থানায় করা মামলায় অভিযোগ করেন, তাঁকে বিয়ে করে সাদিয়া জান্নাত কানাডায় নেওয়ার কথা বলেন। কানাডায় তাঁর ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেশে ফেরত আনার কথা বলে দফায় দফায় তাঁর কাছ থেকে মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এতে তাঁর স্বামী এনামুল হাসান জিহাদসহ আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। জানা যায়, ওই মামলায় প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাদিয়া জান্নাতকে বনানী থেকে গ্রেপ্তারও করেছিলেন। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার পর পরিদর্শক শেখ মো. রোকোনুজ্জামান তদন্ত শুরু করেন। তিনিও বদলি হলে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে তদন্তের দায়িত্ব পান পরিদর্শক রেজাউল করিম। তিনি এনামুল-জান্নাত দম্পতিসহ পাঁচজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।


অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কানাডাপ্রবাসী ও ব্যবসায়ী পাত্রী সেজে সাদিয়া প্রতারণা করতেন। তাঁর স্বামী এনামুল সেই চক্রের হোতা। চক্রটি ব্যবসায়ী নাজির হোসেন ছাড়াও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোট ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।


অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, সাদিয়া প্রতারণা করে যে টাকা নিতেন, তা তাঁর স্বামী এনামুল হাসান জিহাদের ব্যাংক এশিয়ার শ্যামলী শাখার দুটি অ্যাকাউন্টে জমা রাখতেন। নাজির হোসেনের কাছ থেকে প্রতারণা করে যে তারিখগুলোতে টাকা নিয়েছেন, সেই তারিখেই এনামুল ব্যাংক এশিয়ার ওই অ্যাকাউন্টে সমপরিমাণ টাকা জমা করেছেন। তাঁর অ্যাকাউন্টে ৪ কোটি ৯২ লাখ ১৩ হাজার টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট ওই অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ লেনদেন হয়। ওই লেনদেনের পর তাঁর ওই অ্যাকাউন্টে আর কোনো টাকা ছিল না।


সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা শরীফুল জানতেন প্রতারণার টাকা এনামুলের অ্যাকাউন্টে জমা আছে। তিনি ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তবে তিনি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য যথাযথ কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি।


সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান জানান, ইতিমধ্যে মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক শেখ রোকোনুজ্জামান ও বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তিনি। এ ছাড়া মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিমেরও বক্তব্য নিয়েছেন। অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক শরীফুল ইসলামকে তাঁর বক্তব্যের জন্য ডাকা হয়েছে। তিনি বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা কর্মরত। 


শেয়ার করুন