রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলকায় ৯৫২টি পুকুর অক্ষত ও প্রকৃত অবস্থায় রেখে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সেখানে যাতে আর কেউ কোনো পুকুর দখল বা পুকুরে মাটি ভরাট না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে বলেছেন আদালত।
সোমবার (৮ আগস্ট) এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মন্ডল। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সামিউল আলম সরকার।
এর আগে ২০১৪ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় পুকুর ভরাট ও দখলের সংবাদ গণমাধ্যম প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপি) পক্ষে আইনজীবী শওকত উদ্দিন রেন্টু গণমাধ্যমের সংবাদ যুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।
রিটে বন ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়র, পরিবেশ অধিদফতর রাজশাহী বিভাগের পরিচালক, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করে। রুলে রাজশাহী মহানগরে (রাসিকের) ভেতরে পুকুর ভরাট বন্ধে এবং সেগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ওই আদেশ অনুযায়ী রাজশাহী জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় রেকর্ড অনুযায়ী ৯৫২টি পুকুর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর আজ ওই রুল যথাযথ রায় ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেছেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন আর যাতে কোন পুকুর ভরাট ও দখল না হয়, তা বিবাদীদেরকে নিশ্চিত করতে হবে। রাজশাহী সিটি মেয়র, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী জেলা প্রশাসককে বিদ্যমান পুকুরগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।
পুকুরগুলো যাতে প্রকৃত বা পূর্বের অবস্থায় থাকে তা, নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। রিট আবেদনটি চলমান মামলা হিসেবে অব্যাহত থাকবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীর অনেক পুরাতন দীঘির দখলকৃত অংশ পুনরুদ্ধার করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, রাজাশাহীতে প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক পুকুর ভরাট ও দখল করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। কিন্তু কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
দেশের সংবিধান পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলাধার সংরক্ষণ আইনে সুনির্দিষ্টভাবে জলাধার সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে, তা সত্বেও রাজশাহী শহরে শত-শত পুকুর দখল ভরাট হলেও কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এরপর হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট দায়ের করা হয়।
রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। ওই রুলের শুনানি শেষে আদালত আজ রায় দিয়েছেন। রায়ে রাজশাহীর ৯৫২টি পুকুর ভরাট- দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের পাশাপাশি এক গুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন।