আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব দল নিজেদের প্রস্তুত করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বিএনপি নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে।
অভ্যন্তরীণ একাধিক জরিপসহ নানা প্রক্রিয়ায় প্রার্থী চূড়ান্তে কাজ করছে দলের হাইকমান্ড। যদিও তিনশ সংসদীয় আসনের মধ্যে প্রায় দেড়শ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে তেমন সমস্যা বা জটিলতা দেখছে না বিএনপির হাইকমান্ড।
এই আসনগুলোর প্রার্থীরা মোটামুটি নির্ধারিত, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারাই দলের প্রার্থী ছিলেন। বাকি আসনগুলোর মধ্যে কোথায় জটিলতা রয়েছে, তা জরিপ এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড এরই মধ্যে তা চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দলটি শতাধিক আসনকে ‘জটিলতাপূর্ণ’ বলে মনে করছে। এসব আসনের প্রতিটিতে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী মাঠে তৎপর রয়েছেন। এমন অবস্থায় প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে ‘জটিলতা নিরসনে’ উদ্যোগী হয়েছে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যেগুলোতে জটিলতা বা সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ আসনেই এবার প্রার্থিতায় পরিবর্তন আসতে পারে। বিতর্কিত কাউকে প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এলাকায় জনপ্রিয়, ক্লিন ইমেজসম্পন্ন ব্যক্তিদের এসব আসনে দলীয় প্রার্থী করা হবে। তাই যেসব আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছে কিংবা নানা গ্রুপিং বিরাজমান, তাদের কেন্দ্রে ডেকে এনে দলের বার্তা-নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গত সোমবার থেকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘জটিলতাপূর্ণ’ বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
জানা গেছে, গত কয়েকদিনে রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলার অর্ধশত আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
বৈঠকগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এই বার্তা দিচ্ছেন যে, আগামী নির্বাচনে দল থেকে যাকেই প্রার্থী করা হবে, তাকেই মেনে নিতে হবে এবং গ্রুপিং-বিভেদ ভুলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসনভিত্তিক সম্ভাব্য সব প্রার্থীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের জানিয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন প্রার্থী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তাদের জানিয়েছেন যে, আগামী মাসের মধ্যে দেড়শ থেকে দুইশ আসনে দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে ঘোষণা করা হতে পারে। প্রস্তুতি প্রায় শেষ দিকে।
এদিকে, জটিলতাপূর্ণ আসনগুলোর সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরাও কাজ করছেন। এর অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন তারা। এসব বৈঠকেও দলের নির্দেশনা তুলে ধরে প্রার্থীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা বিভিন্ন আসনের নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বসছি। এসব বৈঠকের উদ্দেশ্য একটাই বার্তা দেওয়া যে, আগামীতে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।