০৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ০৩:৫৫:৩৪ পূর্বাহ্ন
কুয়াকাটার সৈকতে ঝিনুকের ঝলক, পর্যটকে মুখরিত বালুচর
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৯-২০২৫
কুয়াকাটার সৈকতে ঝিনুকের ঝলক, পর্যটকে মুখরিত বালুচর

ভোরের হিমেল বাতাসে যখন কুয়াকাটার নীল সমুদ্র ধীরে ধীরে ছুঁয়ে যায় তীর, তখন চোখে পড়ে এক অসাধারণ দৃশ্য। ঢেউ ভাঙা বালুচরে ছড়িয়ে থাকা ঝিনুকের সারি। সূর্যের প্রথম আলো পড়তেই সেই রঙিন ঝিনুকগুলো ঝিকিমিকি করে ওঠে, যেন সমুদ্র নিজেই সাজিয়েছে মুক্তোর মালা।


একদিকে বিশাল সমুদ্র, আরেক পাশে সবুজ বনবেষ্টনী।


তার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা বীচ পথ। হেঁটে চলতে চলতে মনে হয় প্রকৃতি যেন খুলে দিয়েছে নিজের সেরা প্রদর্শনী। দূর থেকে দেখলে বালুচরকে মনে হয় রূপালি কারুকাজে আঁকা এক বিশাল ক্যানভাস, আর সেই দৃশ্য দেখতে সকাল থেকেই ভিড় জমে পর্যটকদের। ঢেউয়ের ফাঁকে ছোট ছোট শিশুরা খুঁজে বেড়ায় ঝিনুক।

পেলে আনন্দে ভরে যায় তাদের চোখ-মুখ। তরুণ-তরুণীরা হাতে তোলে রঙিন ঝিনুক। কেউ রাখে স্মৃতির খাতায়, কেউ ক্যামেরার ফ্রেমে। আবারো ঢেউ আসে, আবার ঝিনুক পানিতে হেসে ওঠে।

বিকালের সোনালি আলোয় সৈকতের রূপ যেন আরো বদলে যায়। তখন ঝিনুক শুধু প্রকৃতির উপাদান নয়, হয়ে ওঠে ছবির কেন্দ্রবিন্দু। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে; ঝিনুক হাতে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। কুয়াকাটায় আসা মানেই যেন একবার ঝিনুক হাতে ছবি না তুললে সফরটাই অপূর্ণ থেকে যায়।

ভাটার সময় যখন সমুদ্রের পানি সরে যায়, তখন বালুচরে নেমে পড়েন স্থানীয় নারীরা।


তারা সংগ্রহ করেন ঝিনুক, যা শীতের মৌসুমে হয়ে ওঠে অর্থকড়ির উৎস। সৈকতের ধারে বসে যায় অস্থায়ী দোকান, যেখানে বিক্রি হয় ঝিনুক দিয়ে তৈরি হার, দুল, শোপিস, ছোট বাক্স। পর্যটকরা সেগুলো কিনে নিয়ে যান কুয়াকাটার একটি টুকরো স্মৃতি হিসেবে।

সেই দোকানগুলোর একটিতে বসে ফাতেমা বেগম ঝিনুক গেঁথে বলছিলেন, এই ঝিনুক দিয়েই সংসার চলে। মৌসুমে যা বিক্রি হয়, তা দিয়েই অনেক খরচ মেটাতে পারি। তবে তিনি জানেন, ঝিনুক সংগ্রহে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু জীবিকা তো আর থেমে থাকে না।


এই সৌন্দর্যের আড়ালে আছে এক ধরনের শঙ্কা। পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান সতর্ক করে বলেন, ঝিনুকের সৌন্দর্য উপভোগ করুন, কিন্তু লাগামহীন সংগ্রহ চলতে থাকলে কুয়াকাটার জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। উপকূলের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক কে এম বাচ্চু বলেন, ঝিনুক শুধু দেখার বস্তু নয়, এটি উপকূলের প্রাণ। ঢেউয়ের তালে যখন ঝিনুক ঝলমল করে, মনে হয় প্রকৃতিই যেন তুলেছে তার সেরা রঙতুলি।


কবি হেনরী স্বপনের ভাষায়, কুয়াকাটার ঝিনুক মানেই এক খণ্ড কবিতা। সকাল থেকে সন্ধ্যা ঝিনুক আর ঢেউ মিলিয়ে তৈরি করে এক অনবদ্য ছন্দ, যা হৃদয়ে থেকে যায় দীর্ঘকাল। আর সেই মুহূর্তে, সৈকতের ধারে দাঁড়িয়ে মনে হয় সমুদ্র শুধু ঢেউ নয়, তার গভীরে লেখা আছে প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ কবিতা, ঝিনুকের ভাষায় আর ঢেউয়ের ছন্দে।


শেয়ার করুন