১৪ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৬:৪৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
মাচাদোকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: ট্রাম্প
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৫
মাচাদোকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: ট্রাম্প

ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার পর মার্কিন প্রশাসন নোবেল কমিটিকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে নীরব থাকলেও পরে মাচাদোর সঙ্গে ফোনালাপের কথা জানিয়ে বলেন, ও চাইলে পুরস্কারটা আমাকেই দিয়ে দিত।’


নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ‘একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ উত্তরণে সংগ্রাম’ ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মাচাদোকে ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ভেনেজুয়েলায় দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসনের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করে আসছেন।


পুরস্কার ঘোষণার কিছুক্ষণ পর স্প্যানিশ দৈনিক  এল পাইসের সঙ্গে আলাপে মাচাদো বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে বিস্তারিত কিছু জানাতে চান না। তিনি শুধু বলেন, ট্রাম্পের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।


পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প নিজেই নিশ্চিত করেন, ‘যিনি পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি আমাকে ফোন করে বললেন, ‘আমি এই পুরস্কারটি আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি, কারণ আসলে আপনিই এটি পাওয়ার যোগ্য।’ এটা খুব সুন্দর ব্যাপার। আমি বলিনি, তাহলে আমাকেই দাও- যদিও উনি দিলে খারাপ হতো না!’


তিনি আরও বলেন, ‘আমি ওকে অনেকভাবে সাহায্য করেছি। ভেনেজুয়েলায় এখন ভয়াবহ অবস্থা, পুরোপুরি বিপর্যয়। তাই বলা যায়, পুরস্কারটি ২০২৪ সালের জন্য দেওয়া হয়েছে, যখন আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলাম।’


নোবেল কমিটির ঘোষণার পরপরই হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চুং সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘নোবেল কমিটি প্রমাণ করেছে, তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।’


মাচাদো বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যুক্ত রয়েছেন। তিনি একসময় আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন, তবে আন্দোলন চালিয়ে যান। অতীতে ট্রাম্প প্রশাসনের বহু কর্মকর্তা তার প্রশংসা করেছেন এবং মাদুরো সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন।


২০২৪ সালে মাচাদোর মনোনয়ন প্রস্তাব করেন মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও ও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ। তারা এক চিঠিতে লেখেন, ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য মাচাদোর সাহস ও নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব তাকে এই পুরস্কারের যোগ্য করে তুলেছে।’


তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ভেনেজুয়েলা বিষয়ক বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেল বলেন, ‘নোবেল পুরস্কার বহু আগেই তার মর্যাদা হারিয়েছে।’


বিশ্লেষকেরা বলছেন, নোবেল কমিটি আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার বিরোধীপক্ষ উভয়কেই বার্তা দিতে চায়, পরিবর্তন হোক শান্তিপূর্ণ উপায়ে, সামরিক নয়।


অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, ‘নোবেল কমিটি মাঝে মাঝে এমন ব্যক্তিকেও পুরস্কার দেয়, যিনি শান্তির জন্য কিছুই করেননি। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে সংকট সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন।’


পুতিনের মন্তব্যের পর ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ!’


এদিকে মাচাদো তার পুরস্কারটি উৎসর্গ করেছেন ভেনেজুয়েলার ভুক্তভোগী জনগণ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি, যিনি আমাদের লক্ষ্যে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছেন।’


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মাচাদোর নোবেল জয় ভেনেজুয়েলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তি দেবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক মহলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।


শেয়ার করুন