বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৩১ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ বিলিয়ন বা ৮১৮ কোটি। জনসংখ্যার এই দ্রুত বৃদ্ধি পৃথিবীর মানুষের সামনে বহু নতুন প্রশ্ন ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা কি পৃথিবীকে প্রকৃত অর্থে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’–এর বাসযোগ্য আবাস হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে? মানুষ কি তার মর্যাদা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে?
৮১৮ কোটি মানুষের সবাই কি অনাহারের ভয় থেকে মুক্তভাবে বাঁচতে পারবে, নাকি অনেকে এখনো আবর্জনার স্তূপ থেকে পাওয়া শুকনা রুটি বা হাড়কে আশীর্বাদ হিসেবে দেখবে? জ্ঞানের ভাণ্ডার কি সত্যিই সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত হবে, নাকি তা ধনী–শ্রেণির বিশেষ সুবিধা হিসেবেই থেকে যাবে? উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রেক্ষাপট থেকে দেখলে পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক। এই জনসংখ্যার মধ্যে ১৩৫ কোটি বাস করে উন্নত দেশে, আর ৬৮৩ কোটি বাস করে উন্নয়নশীল দেশে।
শ্রম, কর্মসংস্থানসহ মৌলিক মানবাধিকার কি সবার জন্য সমানভাবে পাওয়া যাবে? উত্তর হচ্ছে—না।
যদি না পাওয়া যায়, তবে প্রতিটি সচেতন মানুষের দায়িত্ব; এই সমস্যা নিয়ে ভাবা এবং আলোচনা করা যে আমরা ব্যক্তি ও জাতি হিসেবে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। দায়িত্ব মানেই সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করা যেমন জরুরি, তেমনি ব্যক্তি হিসেবেও ভূমিকা রাখা অপরিহার্য।
এক সময় পাকিস্তান ছিল বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ।
আজ তা পঞ্চম স্থানে এবং বর্তমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শিগগিরই চতুর্থ স্থানে পৌঁছাবে। পাকিস্তানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা আরো গুরুতর, কারণ এটি বহু সামাজিক ও পরিবেশগত সংকটের মূল সূত্র। এটি কেবল মানুষের সংখ্যার বিষয় নয়; বরং তাদের জীবনমানের প্রশ্ন। শিশু অপুষ্টি, শিক্ষার অপ্রতুলতা, দারিদ্র্যসহ নানা সংকটের পেছনে রয়েছে জনসংখ্যার চাপ।
প্রশ্ন হলো, দ্রুত হ্রাসমান সম্পদ ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাকিস্তান কি এত বড় জনসংখ্যার ব্যয় বহন করতে প্রস্তুত? স্বাভাবিকভাবেই এর উত্তর—না।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক অধিকার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু আমরা কেন প্রতি বছর আরো মানুষ যোগ করে এই বোঝা বাড়াচ্ছি? পাকিস্তানের বর্তমান জনসংখ্যা ২৫ কোটিরও বেশি, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার ২.৫৬%। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ মানুষ যোগ হচ্ছে; যা নিউজিল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এ প্রবণতা চলতে থাকলে মাত্র ৩০ বছরেই পাকিস্তানের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে।
তুলনায় ইরানে এটি ঘটবে ৭৮ বছরে, বাংলাদেশে ৫৪ বছরে, মালয়েশিয়ায় ৬৪ বছরে, ইন্দোনেশিয়ায় ৭০ বছরে, ভারতে ৭০ বছরে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৪০ বছরে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, পাকিস্তান কি তার সম্পদ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমান হারে বাড়াতে পারছে? উত্তর একটি বড় ‘না’। বর্তমানে ২ কোটি ৫১ লাখ শিশু স্কুলের বাইরে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের দারিদ্র্যের হার ৪৪.৭% এবং তা বাড়ছে। প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লাখ তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করে, কিন্তু অর্থনীতি তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না।
সূত্র : পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদকীয়।

