২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৭:৫৫:০২ অপরাহ্ন
ইমরান খানকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’ বলা হাস্যকর: পিটিআই
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২৫
ইমরান খানকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’ বলা হাস্যকর: পিটিআই

পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লে. জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেনাবাহিনীবিরোধী বক্তব্য তৈরি ও ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যা রাজনীতির সীমানা ছাড়িয়ে এখন ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকিতে’ পরিণত হয়েছে।


তার এই মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘হাস্যকর’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। দলটি বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কোনোভাবেই ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ নন। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক সাংবিধানিক সংশোধনী পাসের পর দেশটিতে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছে পিটিআই।


শনিবার (৬ ডিসেম্বর) 


ইসলামাবাদের খাইবার পাখতুনখাওয়া হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগের জবাব দেন পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের জনগণকে দূরে ঠেলবেন না। তারা ইমরান খান ও পিটিআইয়ের সঙ্গে আছেন। ইমরান খান কোনো জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি নন; বরং তিনিই মানুষকে একত্রে ধরে রেখেছেন।’


রাজা আরও বলেন, দেশে নানা ধরনের বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক বর্ণনা রয়েছে, কিন্তু ইমরান খান সব ধরনের বিভাজন এড়িয়ে সব সময় ‘পাকিস্তানের বর্ণনার’ সঙ্গে ছিলেন এবং তার সমর্থক, কর্মী ও ভোটাররাও সেই নীতিতেই বিশ্বাসী।


তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘খোদার দোহাই, এমন করবেন না। ইমরান খানকে আপনারা বাদ দিতে পারবেন না। আর যদি—খোদা না করুন—করেই ফেলেন, তাহলে এই দেশের স্বার্থকে এক জায়গায় রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। খাইবার পাখতুনখাওয়া সরকারকে আক্রমণ করে একটি অনির্বাচিত সরকার বসালে তার পরিণতির দায়ভার আপনাদেরই নিতে হবে।’


ডিজি আইএসপিআরের সংবাদ সম্মেলনকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে রাজা বলেন, দলটি ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দেবে না। ‘আজ বলা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা নাকি জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি। এটি হাস্যকর। কিন্তু এমন অভিযোগ এই প্রথম নয়।’


১৯৯০-এর দশকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে সেনাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বারবার জনপ্রিয় নেতাদের জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি বলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তারা কখনো জনগণের মন থেকে তুলে ফেলা যায়নি। পাকিস্তানের জনগণ সব সময় বুঝে এসেছে কারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণে থাকে—এ কারণেই তারা আজও ইমরান খানের পাশে।’


রাজা বলেন, পাকিস্তানের ইতিহাসে বহুবার গণতন্ত্রকে দুর্বল করে কর্তৃত্ববাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামরিক শাসন এলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সব সময় ব্যর্থ হয়েছে।


তিনি অভিযোগ করেন, দেশে বারবার বলা হয়েছে—গণতন্ত্র, আইন ও সংবিধান নাকি এই দেশের জন্য উপযুক্ত নয়; দেশকে নাকি ‘লাঠি’ দিয়ে চালাতে হবে। কিন্তু প্রতিটি শাসকই গণতন্ত্রকে আগের চেয়ে দুর্বল রেখে গেছে।


পিটিআই মহাসচিব প্রশ্ন তোলেন—দেশ কি শক্তির জোরে উন্নত হতে পারে? যদি সত্যিই তা সম্ভব হতো, তবে আগের সামরিক শাসনামলেই দেশ উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে যেত।


বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি ‘বৃহত্তর সংলাপের’ প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত না করলে ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করবে। ‘তাহলে কোনো পরিবর্তন আসবে না, বরং দেশ আরও পিছিয়ে যাবে।’


সাম্প্রতিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা আগের কোনো সামরিক শাসনামলেও দেখা যায়নি।’


রাজা সেন্সরশিপের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, যে কেউ স্বাধীনভাবে কথা বললে পেকা আইন, তদন্ত বা হয়রানির মুখোমুখি হতে পারে—যেমনটি হয়েছে আইনজীবী দম্পতি ইমান মাজারি ও হাদি আলী চাট্টার ক্ষেত্রে।


তিনি বলেন, পিটিআই সংলাপে প্রস্তুত—কিন্তু খাইবার পাখতুনখাওয়ার জনগণ বা তাদের মুখ্যমন্ত্রীকে অবমাননা করা যাবে না। ‘এই বর্ণনার লড়াইয়ে দেশের ভবিষ্যৎ বা খাইবার পাখতুনখাওয়াকে বাজি ধরবেন না। এখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল; সন্ত্রাসের হুমকি রয়েছে। পাকিস্তানকে উত্তরণের পথে নিতে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো পিটিআই।’


তিনি আরও বলেন, দলের ভেতরের কিছু সমর্থক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্মী অভিযোগ করছেন যে পিটিআই কেন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। কিন্তু ‘আমরা বসে আছি দেশের স্বার্থে—অশান্তি চাই না,’ মন্তব্য করেন রাজা। তিনি জানান, দেশ ও জনগণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেবে দল ও ইমরান খান।


‘ইটের জবাবে পাথর ছোড়া খুব সহজ; কিন্তু দেশের স্বার্থ এতে নেই, তাই আমরা তা করব না।’


পিটিআই নেতা ও সাবেক জাতীয় পরিষদ স্পিকার আসাদ কাইসারও ডিজি আইএসপিআরের বক্তব্যের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের প্রদেশে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও আবেগ রয়েছে। এমন ভাষা ব্যবহার করা উচিত হয়নি। আমরা চাই এই মন্তব্য প্রত্যাহার করা হোক, কারণ পুরো প্রদেশই এটিকে অসম্মান বলে মনে করছে।’


শেয়ার করুন