২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৮:৪৯:০২ অপরাহ্ন
ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার ছাত্রশিবিরের বিদায়ী সভাপতির
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১২-২০২৫
ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার ছাত্রশিবিরের বিদায়ী সভাপতির

শহীদদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিদায়ী সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান তরুণ সমাজের মধ্যে যে আদর্শিক জাগরণ সৃষ্টি করেছে, তা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর চীন–মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন–২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরও দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটেনি। বিশেষ করে ১৯৭১–৭৫ সময়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়। এ প্রেক্ষাপটেই ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয়।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এবং ১৯৭১ থেকে ২০২৪— প্রতিটি পর্যায়েই রাজনৈতিক পরিবর্তন এলেও দুর্নীতি, জবাবদিহির অভাব ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করেন, নির্বাচনকে কারচুপির উৎসবে পরিণত করা হয় এবং তরুণদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়। ৭১-এর চেতনাকে ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ধরে মাফিয়াতন্ত্র, ব্যাংক লুট, গুম-খুন ও দমন-পীড়নের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। ভিন্নমত দমনে জেল-জুলুম ও বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালানো হয় এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে।

ছাত্রশিবিরের সাবেক এই সভাপতি আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে মানবিক সত্তাহীন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ‘শিবির মানেই হত্যাযোগ্য’— এমন ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করা হয়। ‘ছাত্রশিবির’ ট্যাগ দিয়ে বহু সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। ২০১৩ সালে শাহবাগকে কেন্দ্র করে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে ফ্যাসিবাদ আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয় এবং দাড়ি-টুপিকে জঙ্গিবাদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে প্রশাসন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ইসলাম ও ধর্মীয় মূল্যবোধ দমন করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণআন্দোলন বিস্ফোরিত হয় এবং শেখ হাসিনার শাসনের পতন ঘটে।

তিনি বলেন, তরুণদের আত্মত্যাগ নতুন এক আদর্শিক জাগরণ সৃষ্টি করেছে, যা ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয়। শহীদদের আত্মত্যাগের ফলেই আজ উন্মুক্ত দাওয়াতি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের রেখে যাওয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারলে ইতিহাসের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিন পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ইসরাইলি হামলায় প্রতিনিয়ত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। নারী ও শিশুসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন, আর অবরোধ ও খাদ্যসংকটে হাজার হাজার মানুষ অনাহারের মুখে। এমন বাস্তবতায় সব বাধা অতিক্রম করে আন্দোলনের গতি আরও জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি। মজলুম মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। উদ্বোধক ছিলেন শহীদ মুনতাসির রহমান আলিফের বাবা সৈয়দ গাজিউর রহমান। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনের নেতা, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী প্রতিনিধি, সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতারা এবং দেশি-বিদেশি অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

শেয়ার করুন