৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৩৬:১৩ পূর্বাহ্ন
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের গ্রহণযোগ্যতা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৫
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের গ্রহণযোগ্যতা

বান্দার জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না। মানুষের ভালোবাসা ক্ষণস্থায়ী, স্বার্থনির্ভর ও পরিবর্তনশীল; কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা চিরস্থায়ী, পরিপূর্ণ ও কল্যাণময়। যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন, তার জন্য আসমান ও জমিন; উভয় জায়গাতেই সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতার দ্বার খুলে যায়। আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে সেই অপূর্ব সম্পর্কের কথাই আমাদের সামনে তুলে ধরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হৃদয়স্পর্শী হাদিসটি-


عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا أَحَبَّ اللهُ الْعَبْدَ نَادَى جِبْرِيْلَ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحْبِبْهُ فَيُحِبُّهُ جِبْرِيْلُ فَيُنَادِيْ جِبْرِيْلُ فِيْ أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبُّوْهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُوْلُ فِي الأَرْضِ


আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত।


মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালবাসেন তখন তিনি জিব্রাঈল (আ.)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালোবাসেন, কাজেই তুমিও তাকে ভালোবাস। তখন জিব্রাঈল (আ.)-ও তাকে ভালোবাসেন এবং জিব্রাঈল (আ.) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাহকে ভালোবাসেন। কাজেই তোমরা তাকে ভালোবাস। তখন আকাশের অধিবাসী তাকে ভালোবাসতে থাকে।

অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩২০৯)

হাদিসের ব্যাখ্যা


এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে আল্লাহর ভালোবাসার এক অপূর্ব চিত্র তুলে ধরেছেন। আল্লাহ যখন কোনো বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, তখন সেই ভালোবাসা গোপন থাকে না; বরং তা ধাপে ধাপে আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে আল্লাহ তাআলা জিব্রাঈল (আ.)-কে জানান যে, অমুক বান্দা তাঁর প্রিয়।


এটি বান্দার জন্য সর্বোচ্চ মর্যাদার ঘোষণা—কারণ জিব্রাঈল (আ.) হচ্ছেন ফেরেশতাদের নেতা ও ওহির বাহক।

এরপর জিব্রাঈল (আ.) সেই বান্দাকে ভালোবাসেন এবং আকাশের ফেরেশতাদের মাঝে ঘোষণা দেন- “এই বান্দা আল্লাহর প্রিয়”। ফলে আসমানের সকল বাসিন্দার হৃদয়ে সেই বান্দার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এভাবে বান্দার গ্রহণযোগ্যতা কেবল মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং তা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত সৃষ্টিকুলের মধ্যেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।


এর প্রাকৃতিক ফল হিসেবে পৃথিবীতেও সেই বান্দার জন্য সম্মান, গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।


মানুষ অজান্তেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়, তার কথা গ্রহণ করে, তার উপস্থিতিকে সম্মান করে। এখানে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, প্রকৃত সম্মান মানুষের কৃত্রিম প্রচেষ্টা বা আত্মপ্রচারণা থেকে আসে না; বরং তা আসে আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে। যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন, তাকেই আল্লাহ মানুষের হৃদয়ে প্রিয় করে দেন।

এই হাদিস আমাদের শেখায় যে, মানুষের বাহ্যিক খ্যাতি বা প্রশংসার পেছনে ছোটা নয়; বরং আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের জন্য ঈমান, তাকওয়া ও নেক আমলে অবিচল থাকাই হলো প্রকৃত সাফল্যের পথ। কারণ আল্লাহর ভালোবাসা একবার লাভ হলে, আসমান ও জমিন; উভয় জায়গাতেই তার প্রতিফলন ঘটতে থাকে।


শেয়ার করুন