আফগানিস্তান নিয়ে কথা হোক কিংবা তালেবান শাসন নিয়ে, সবার আগে যে প্রসঙ্গটি উঠে আসে সেটি হলো ‘নারী’। কেমন আছে আফগানের নারীরা অথবা কেমন ছিল তারা? কতটা অমিল একাল কিংবা সেকালে, সেসব নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই অন্তর্জালে। প্রগতিশীল জীবনযাপন থেকে আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কী কী ঘটেছে আফগান নারীদের জীবনে, তার গল্প যেন আরব্য রজনীর ইতিহাসের চেয়েও চমকপ্রদ।
আফগানিস্তানে তালেবান শাসন যে একেবারেই নতুন, তা কিন্তু নয়। ১৬ আগস্ট, ২০২১ সালে কাবুল দখল নেওয়ার পর আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার দখল নিয়েছে তালেবানরা। যদিও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানের দুই দশকের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এমনতর পলায়ন এবং এত অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে, প্রায় বিনা প্রতিরোধে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
আফগানিস্তানের জাতিগত আলোচনা প্রসঙ্গে বরাবরই বেশ জোরেশোরে আওয়াজ ওঠানো হয়েছে আফগান নারীদের অধস্তনতা এবং নারী অধিকার আদায়ের ব্যাপারে। কিন্তু আফগানিস্তান দখল-পুনর্দখলের রাজনৈতিক খেলায় নারীর অবস্থান সব সময়ই ছিল গৌণ। আরও খোলাসা করে বললে, আফগান ক্ষমতা দখলের খেলায় নারীদের নিয়ে আলোচনায় মিডিয়া যতটা সরব ছিল, ততটাই নিশ্চুপ ছিল প্রকৃত অর্থে নারী মুক্তির আলোচনায়।
আফগান নারীদের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের এই গৃহবন্দী অবস্থান আফগান নারীরা মেনে নিয়েছিল। মূলত বয়ঃসন্ধিকালেই নারীরা ঘরের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যেত, এরপর ‘দাদি’ হয়ে তারা কখনো কখনো বের হয়ে আসত। তুলনামূলকভাবে উদার কাবুলের বিপরীতে আফগানের অন্যান্য অঞ্চলে তালেবানের শাসন ছাড়াও ঐতিহ্যগতভাবে নারীরা অনাত্মীয় পুরুষদের সঙ্গে কথা বলত না। ব্যক্তিগত এবং জনজীবন এখানে ছিল তীব্রভাবে বিভক্ত। কোনো নারী যখন ঘর থেকে বের হতো, তখন সে বোরকার নির্জনতায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখত। তালেবানদের উত্থানের শত শত বছর আগে থেকে সেখানে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্টরা যখন কাবুলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তখন ধর্মীয় এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে আফগানের নারীদের সুরক্ষিত রাখার এই ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রাতারাতি ভেঙে পড়ে। প্রবীণ ও পুরুষেরা কমিউনিস্টদের এই অনধিকার চর্চা মেনে নেয়নি কোনো দিনও। যদিও আফগান নারীরা আসলে কী চেয়েছিল সেটাও পরিষ্কার করে বলা সম্ভব নয়। কেননা জন্ম থেকেই সমাজের নির্ধারণ করে দেওয়া গৃহবন্দী থাকার চিন্তা ও মনন তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের কিংবা মুক্ত করার স্বাভাবিক চিন্তার সুযোগই হয়তো দেয়নি।