২১ আগস্ট ২০০৪। সকাল থেকে নিজেদের কর্মসূচি সফল করতে একদল নেতাকর্মী প্রস্তুতি নিচ্ছিল। টার্গেট সবচেয়ে বেশি জনসমাগম করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান জানান দেওয়া। অপরদিকে, একদল যুবক রাতের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দিকে। তাদের টার্গেট সমাবেশস্থলের আশপাশের ভবনের ছাদে অবস্থান নেওয়া এবং নির্দেশনা মতো গ্রেনেড নিক্ষেপ করা।
সকাল গড়িয়ে দুপুর। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিছিলে মিছিলে মুখরিত। বিকেলে অস্থায়ী মঞ্চে এসে পৌঁছান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বক্তব্য শেষ করে সবেমাত্র নামবেন, ততক্ষণে বিকট শব্দে কেঁপে উঠল পুরো এলাকা। মুহুর্মুহু এমন বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রক্তগঙ্গা বয়ে গেল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে। প্রয়াত মেয়র হানিফসহ কয়েকজন নেতা মানবঢাল তৈরি শেখ হাসিনাকে আগলে রাখলেন। শব্দ কিছুটা বন্ধ হয়েছে অনুমান করে তাকে উঠিয়ে দিলেন গাড়িতে। দেশের ইতিহাসে সন্ত্রাসের নজিরবিহীন নৃশংসতা দেখল বিশ্ব। সে ঘটনায় আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন এবং সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় দুইটি মামলা চলে। একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি বিস্ফারক আইনের মামলা। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সাল আদালত রায় দেন। এ দুই মামলার রায় মোট ৪৯ জন আসামির মধ্যে আদালত ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকি ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। মামলাটি এখন উচ্চ আদালত বিচারাধীন।
আওয়ামী লীগ সবসময় বলে আসছে, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট একই সূত্রে গাঁথা। বিশেষ করে ২১ আগস্টের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সবসময় বিএনপিকে দায়ী করছে। তারা বলছে, রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় এ হামলা হয়েছে। বিএনপি এতে জড়িত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট, এ দুই হত্যাকাণ্ড একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলা হয়েছে, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত। ২১ আগস্ট হত্যাকারীদের নেতা হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে বলেছেন হাওয়া ভবনের পরিকল্পানায় তারেক রহমানের নির্দেশে হামলা করে তারা। এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা প্রচলিত আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, জনতার আদালতে প্রামাণিত, ইতিহাসের আদালতেও প্রমাণ হবে।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা করেছে। এদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড। আদালতের রায়ে তা প্রমাণিত এবং এই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দী বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার লক্ষ্যেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বর্বোরোচিত গ্রেনেড হামলা করা হয়। জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্পেশালাইজড মারণাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।