১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৫৪:৫৯ অপরাহ্ন
সার সংকটের কারণ খুঁজতে মাঠে গোয়েন্দারা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৮-২০২২
সার সংকটের কারণ খুঁজতে মাঠে গোয়েন্দারা

দেশে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক তীব্র সার সংকটে পড়েছেন। এ সংকটের কারণ উদ্ঘাটনে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তারা রোববার রাজশাহীতে সার ডিলার ও বিএডিসি এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সার ডিলাররা এদিন জরুরি বৈঠক করে পটাশ সারের সংকট দ্রুত নিরসনের দাবি জানিয়েছেন।

তারা রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন সার কালোবাজারে যাচ্ছে। গোয়ান্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, সার সংকটের কারণ চিহ্নিত করতে তারা মাঠে কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলছে। এর পেছনে কারা রয়েছে, তা বের করার চেষ্টা করছে। এদিকে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নেওয়ায় কুষ্টিয়ায় জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

রাজশাহীতে পটাশ সারের তীব্র সংকট : রোববার পর্যন্ত রাজশাহীর ডিলাররা আগস্টের বরাদ্দের দুই-তৃতীয়াংশ পটাশ বা এমপিও সার পাননি বলে জানা গেছে। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফর উল্লাহ জানান, সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিভাগের প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে সার সংকট নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

বিএডিসির কর্মকর্তা ও রাজশাহীর সার ডিলার সমিতি রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে পটাশ সার সংকটের পেছনে পরিবহণ ঠিকাদার পোটন ট্রেডার্সের গাফিলতি ও অবহেলাকেই দায়ী করেছেন। বিএডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা একদিন পরপরই পোটন ট্রেডার্সকে চিঠি দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হচ্ছে না। রাজশাহী অঞ্চলের ডিলাররা অভিযোগ করেছেন, ডিলাররা সার পাচ্ছেন না; কিন্তু খুচরা কারবারিরা ঠিকই কালোবাজার থেকে সার সংগ্রহ করে দ্বিগুণ দামে কৃষকের কাছে বিক্রি করছেন। তারা পটাশসহ সব ধরনের সার পরিবহণ ও বিতরণ ব্যবস্থায় মনিটরিং জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজশাহী বিএডিসির যুগ্মপরিচালক জুলফিকার হোসেন রোববার বলেন, পটাশ সারের সংকট কাটাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, রাজশাহী অঞ্চলের খুচরা সার ব্যবসায়ীরা যশোরের নওয়াপাড়া, পাবনার নগরবাড়ী ও খুলনার ফুলতলা মোকাম থেকে দেদার পটাশ এনে চড়া দামে কৃষকের কাছে বিক্রি করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের রাজবাড়ী এলাকার কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, ডিলারদের দোকানে কোনো এমওপি নেই দুই মাস ধরে। ফলে খুচরা সার ব্যবসায়ীদের কাছ দ্বিগুণ দামে সার কিনতে হচ্ছে।

কুষ্টিয়ায় কৃষি বিভাগকে দুষছে ভোক্তা অধিকার : সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল। রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় ওই কর্মকর্তা সারের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও কৃষি কর্মকর্তাদের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি কৃষককে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের লোকবল সংকট থাকায় মাঠ পর্যায়ে সার ডিলারদের খুঁজে বের করা কঠিন। বারবার উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। তবে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, ডিলার ও ব্যবসায়ীরা যাতে সার সংকট তৈরি করে ফায়দা লুটতে না পারে, সেজন্য মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি সব ডিলারের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। জানা যায়, সার বিক্রির ক্ষেত্রে কুষ্টিয়ার ডিলার, সাব ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ী কেউই নিয়ম মানছেন না। সবাই বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। সরকার শুধু ইউরিয়ার দাম বাড়ালেও কৃত্রিম সংকট তৈরি অন্যান্য সারের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন ঘুরে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে সেই চিত্র পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে সার নিয়ে আরও নৈরাজ্য হতে পারে-এমন আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

রংপুরে আমন উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে : রংপুরের কৃষকরা বলছেন, ইউরিয়া সার ও ডিজেলের বাড়তি দামে চলতি মৌসুমে আমন লাগানো থেকে ফসল ঘরে ওঠা পর্যন্ত প্রতি একরে গত বছরের চেয়ে ১১ হাজার টাকা ব্যয় বাড়বে। এবার প্রতি একরে কমপক্ষে ব্যয় হবে ৩৬ হাজার টাকা। গত আমন মৌসুমে ব্যয় হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা।

নগরীর ও বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা জানান, প্রতি হেক্টরে আমন চাষ করতে গড়ে ইউরিয়া লাগে ১৮০ কেজি। এ হিসাবে জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টরে আমন চাষে ইউরিয়া লাগবে ২ কোটি ৯৯ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮০ কেজি। প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ৬ টাকা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। গত বছর আমন ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৩৬ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে উৎপাদনে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

চলতি মৌসুমে রংপুরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর। এবার প্রতি হেক্টরে ১১ হাজার টাকা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সে অনুপাতে ব্যয় হবে ৩৬ হাজার টাকা। তাই এবার শুধু রংপুরেই আমন উৎপাদনে কৃষকদের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮০ টাকা।

শেয়ার করুন