২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫৭:২০ অপরাহ্ন
বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ নজর অবকাঠামোয়
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৬-২০২৩
বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ নজর অবকাঠামোয়

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের মানুষের জীবনমান এবং ব্যবসা-বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার সুচিন্তিত গবেষণা ও নীতির বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করেছে। এতে নিজেদের সক্ষমতার ওপর আস্থা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে শক্তি জোগাবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর ফলে দেশের অবকাঠামো খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ অতিমারী এবং এর প্রভাব শেষ হতে না হতেই ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সমগ্র বিশ্বে গভীর অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাওয়ায় সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। রাজস্ব ও মুদ্রানীতির সমন্বয়ে বিশ্বের দেশগুলো সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও এখনো ঝুঁঁকি রয়ে গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে এসেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা আবার সঠিক পথে ফিরে এসেছে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোয় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

advertisement

প্রত্যাশিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য শক্তিশালী ভৌত অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহের নিশ্চয়তা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন। প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে করোনা মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনী বছরের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এত বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। আবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ।

আগামী অর্থবছরে এই ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে, সে আলোকে এসব লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাকাক্সক্ষী বলে মনে হয়েছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এসব লক্ষ্য অর্জন করা অনেক কঠিন হবে এবং শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে না বলে আমার ধারণা। চলমান সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো পুরোপুরি অনুধাবন করতে এবং সে অনুযায়ী সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। আমরা মনে করি, বাজেট অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিয়েছে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।’

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগেও আমরা দেখেছি সংকটের মূল কারণগুলো অনুধাবন না করে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এ জন্য শেষ পর্যন্ত অনুমিতিগুলো সত্য হয় না। বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে আকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট করলে এমন অবস্থা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতি ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বৈশ্বিক সংকট তৈরি হওয়ার পরে সেটাকে বিবেচনায় না নিয়ে গত বছর বাজেট করা হয়। এর ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও বর্তমান বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এই উচ্চ আকাক্সক্ষার বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আয় চলতি বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলে তখন ঘাটতি মেটাতে হয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে বা এডিপি কাটছাঁট করতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। ফলে অনুমিতির দুর্বলতার কারণে পরে অর্থনীতি প্রতিটি জায়গায় হোঁচট খাবে।

মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে সামনের দিনগুলোতে বৈশ্বিক জিডিপি বাড়বে- এ ধরনের কিছু অনুমিতি এবং চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অর্থনীতিকে গতিশীল করবে- এমন ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী সামনের বছরগুলোতে বৈশ্বিক জিডিপি বাড়বে, যা মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করবে। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার যে জোর দিচ্ছে- তা জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এরই মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, যা দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলসংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প চালু হলে দেশের ভৌত অবকাঠামো খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। অর্থ মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রবৃদ্ধির দ্বিতীয় চালিকাশক্তি হিসেবে সরকার সংস্কার কার্যক্রমে জোর দিচ্ছে। এরই মধ্যে বাজেট ঘাটতি কমাতে রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি ঋণে ব্যয় কমাতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে।

শেয়ার করুন