২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১১:১৪:১৩ অপরাহ্ন
৯৯ আসনে নৌকার নো টেনশন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৪
৯৯ আসনে নৌকার নো টেনশন

বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও সারা দেশে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি লড়াই না থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করার পর থেকেই ভোটের মাঠে জমে ওঠে খেলা।


অনেক এলাকাতেই নৌকার প্রার্থীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছেন স্বতন্ত্ররা। সেইসঙ্গে প্রার্থী তালিকায় আছেন নতুন-পুরোনো বিভিন্ন দলের হেভিওয়েট নেতারা। দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে উত্তেজনা। শেষ সময়ে এসে এখন পাড়া-মহল্লায় চলছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের আনাগোনা। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি চলছে তাদের মন জয়ের চেষ্টা।


এমন পরিস্থিতিতেও সারা দেশে শতাধিক আসনে নির্বাচন যেন জমছে না। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এসব আসনে এরই মধ্যে জয় নিশ্চিত করে ফেলেছেন ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত কিংবা সমর্থিত প্রার্থীরা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত না হলেও অনেক ক্ষেত্রে ভোটের মাঠে প্রতিযোগীদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। নিরুত্তাপ এসব আসনে মূলত ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এককভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।


প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসনে প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য রশিদুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার চেয়েছেন নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। এজন্য দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অনেক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে আছেন।


এ ছাড়া আরও অনেক দলের প্রার্থী আছেন। নির্বাচনে সবাই জয়ী হওয়ার জন্যই মাঠে নামেন। কেউ পরাজিত হওয়ার জন্য নির্বাচন করেন না। সবাই আশা করেন তিনি জয়ী হবেন। ফলে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই আগাম বলা ঠিক হবে না। দশ-বিশটি জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাও থাকতে পারে। সেটা দিয়ে পুরো নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা যাবে না।’


এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। ওই নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল। যেসব এলাকায় নির্বাচন হয়েছিল সেখানেও ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে কোথাও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটের ফল নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল না।


সেবার নিবন্ধিত ১২টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এবার সেই সংখ্যা অনেক বেশি। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ভোটে এসেছে ২৭টি। এসব দলের সঙ্গে জোট করে আছে অনিবন্ধিত আরও বেশ কিছু দল।


২০১৪ সালে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীই নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে এবার দলটির বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন এবং অনেক জনপ্রতিনিধি নানা পরিচয়ে ভোট করছেন।


সব মিলিয়ে এবার দশম সংসদ নির্বাচনের তুলনায় প্রায় তিন গুণ প্রার্থী নির্বাচনের দৌড়ে শামিল হয়েছেন। বেশিসংখ্যক রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় জমে উঠেছে প্রতিযোগিতা। এ কারণেই বিএনপির অবরোধ-হরতাল সত্ত্বেও আসনে আসনে নির্বাচনী আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে।


তবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সারা দেশে কমপক্ষে ১০২টি আসনে নির্বাচনী লড়াই জমছে না। এর মধ্যে ৯৯টি আসনে এককভাবে ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় এসব আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত বলা যায়। অন্যান্য দলের প্রার্থী থাকলেও তারা কোনো দিক থেকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছেন না। এর মধ্যে কারও কারও কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। কোনো কোনো প্রার্থী এলাকায় কিছু ব্যানার বা পোস্টার লাগালেও ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলার মতো কর্মকাণ্ড নেই।


অন্যদিকে তিনটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত বলা যায়। দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকার প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় এই দুটি আসনে জাপা প্রার্থীদের বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে না।


সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খোদ রাজধানী ঢাকার ১৫টি আসনের মধ্যে ১০টিতেই তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। ফলে এসব আসনে নৌকার প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত। এই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হলেন- ঢাকা-৬ আসনে সাঈদ খোকন, ঢাকা-৮ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১০ ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা-১১ মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন, ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৫ কামাল আহম্মেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এবং ঢাকা-১৭ আসনে মোহাম্মদ আলী আরাফাত।


সরেজমিন দেখা গেছে, নৌকা প্রতীকের পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে প্রতিটি এলাকা। মূল সড়কগুলোতে অন্য দলের প্রার্থীদের কিছু কিছু পোস্টারও চোখে পড়ে। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প খুব একটা নেই। আবার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ও অলিগলিতে নৌকার ক্যাম্প থাকলেও সেখানে নির্বাচনী আমেজ খুব একটা নেই। দিনের অধিকাংশ সময়ই ফাঁকা পড়ে থাকে। অন্যান্য নির্বাচনের মতো মিছিল-সমাবেশও নেই খুব একটা।


ঢাকা জেলার ৫টি আসনের মধ্যে ঢাকা-২ আসনে কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩ আসনে নসরুল হামিদ বিপু এবং ঢাকা-২০ আসনে বেনজির আহমেদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। নির্বাচনে তাদের জয় শুধুই আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের ধারণা।


জাতীয় নির্বাচনে গোপালগঞ্জে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেননি অন্য কোনো দল কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে সব সময়ই রেকর্ড ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এবারও সেখানে ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে না। গোপালগঞ্জ-২ আসনে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নিশ্চিত জয়েও প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী বাধা হতে পারছেন না। তবে গোপালগঞ্জ-১ আসনে এবার দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন ফারুক খান।


শরীয়তপুর-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ইকবাল হোসেন অপু এবং শরীয়তপুর-৩ আসনে নৌকার নাহিম রাজ্জাক বিজয়ী হতে চলেছেন।


মাদারীপুর-১ আসনে নুরে আলম চৌধুরী লিটন এবং মাদারীপুর-২ আসনে শাজাহান খানের বিপক্ষে শক্তিশালী প্রার্থী নেই।


কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে নৌকার রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এবং কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে নাজমুল হাসান পাপন সহজ জয় পেতে যাচ্ছেন।


টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর ধনবাড়ী) আসনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকও সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হচ্ছেন।


নরসিংদী-২ আসনে নৌকার আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ সহজ জয় পাচ্ছেন। মানিকগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিপক্ষে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রার্থী নেই।


নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের শামীম ওসমানের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারছেন না অন্য প্রার্থীরা। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও তিনি নৌকার প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির জয়ে বড় কোনো বাধা হতে পারছেন না বলে এলাকাবাসীর ধারণা।


ময়মনসিংহের ১১টি আসনের মধ্যে ৯টিতেই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে বর্তমান এমপি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল জয়ী হতে চলেছেন।


নেত্রকোনা-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী সাজ্জাদুল হাসানের বিপক্ষে শক্ত কোনো প্রার্থী নেই। জামালপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী মির্জা আজম এবারও বিজয়ী হতে যাচ্ছেন।


চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে না। তারা হলেন- চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) এস এম আল মামুন, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া, কোতোয়ালি) মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।


কক্সবাজার-২ আসনে আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ আসনে সাইমুম সরওয়ার কমল এবং কক্সবাজার-৪ আসনে শাহীন আক্তার নিশ্চিতভাবে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন।


খাগড়াছড়িতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত দীপংকর তালুকদার এবং বান্দরবানে বীর বাহাদুর উশৈ সিংয়ের পাল্লা ভারী। তারা সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।


নোয়াখালী-৫ আসনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহজ জয় পেতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনে একরামুল করিম চৌধুরী ও নোয়াখালী-৬ আসনে মোহাম্মদ আলী প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন। ফেনী-১ আসনে আলাউদ্দীন আহম্মেদ চৌধুরী এবং ফেনী-২ আসনে নিজামউদ্দিন হাজারীর জয় প্রায় নিশ্চিত বলা যায়।


কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে ৩টিতে সহজেই জয় তুলে নেবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তারা হলেন—কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন শামীম, কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে মো. তাজুল ইসলাম এবং কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, লালমাই) আসনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।


চাঁদপুর-১ আসনে সেলিম মাহমুদ এবং চাঁদপুর-৫ আসনে রফিকুল ইসলাম জিততে চলেছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তারা।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তার মতোই সহজে জিততে চলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের ফয়জুর রহমান বাদল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম। তারা সবাই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী।


সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। বাকি দুটি আসনে সহজে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন বর্তমান দুই মন্ত্রী। তারা হলেন সিলেট-১ আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং সিলেট-৪ আসনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। একইভাবে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জিততে চলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।


মৌলভীবাজার-১ আসনে বর্তমান এমপি নৌকার মো. শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-৩ আসনে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ও মৌলভীবাজার-৪ আসনে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত। হবিগঞ্জ-৩ আসনে আবু জাহিরের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারছেন না অন্য প্রার্থীরা।


রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে দুটিতে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহানপুর) আসনে মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আবদুল ওয়াদুদ দারা সহজে বিজয়ী হতে চলেছেন। তারা দুজনই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।


শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় অনেকটাই জয়ের পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মো. আব্দুল ওদুদ। জয়পুরহাট-২ আসনের (কালাই, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর) আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের জয়ও নিশ্চিত।


বগুড়া-৫ আসনে হাবিবুর রহমান এবং বগুড়া-৭ আসনে ডা. মোস্তফা আলম নান্নু জয়ী হতে যাচ্ছেন। তারা দুজনই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।


সিরাজগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়ের শক্ত প্রতিপক্ষ নেই। পাবনা-৪ আসনে নৌকার গালিবুর রহমান শরীফ এবং পাবনা-৫ আসনে গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের জয়েও তেমন কোনো বাধা নেই। শেরপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর বিপক্ষে এবার শক্ত কোনো প্রার্থী নেই।


পঞ্চগড়-২ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ঠাকুরগাঁও-১ নৌকার রমেশ চন্দ্র সেনের জয়ও প্রায় নিশ্চিত।


দিনাজপুর জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতেই নিরুত্তাপ নির্বাচন হচ্ছে। দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-৪ আসনে আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং দিনাজপুর-৫ মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার জয়ী হতে যাচ্ছেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।


কুড়িগ্রাম-১ আসনে জাতীয় পার্টির এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানের জয়ে বড় কোনো বাধা নেই। রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সহজ জয় পেতে যাচ্ছেন।


রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনের নৌকার প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল ভোটের মাঠে সরব থাকলেও টিপু মুনশির জয় কার্যত নিশ্চিত বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।


রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম। তবে ড. শিরীন শারমিন শঙ্কামুক্ত বলে জানান ভোটাররা।


খুলনা জেলার ৬টি আসনের মধ্যে তিনটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাকি তিনটিতে ভোটের মাঠ অনেকটা একতরফা। খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল, খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের শেখ সালাহউদ্দিন এবং খুলনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম কামাল হোসেন জয়ের পথে রয়েছেন।


বাগেরহাট-১ আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন এবং বাগেরহাট-২ আসনে শেখ তন্ময়ের বিপক্ষে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। বাগেরহাট-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের বিজয়ও প্রায় নিশ্চিত বলে জানা গেছে।


মাগুরার দুটি আসনেই সহজ জয় পেতে পারেন নৌকার প্রার্থীরা। মাগুরা-১ আসনে সাকিব আল হাসান এবং মাগুরা-২ আসনে বীরেন শিকদারকে শক্ত চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছেন না প্রতিদ্বন্দ্বীরা।


নড়াইল-১ আসনে নৌকার বি এম কবিরুল হক মুক্তি এবং নড়াইল-২ আসনে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার জয়ে তেমন কোনো বাধা নেই। সাতক্ষীরা-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের জয়ও প্রায় নিশ্চিত।


বরিশাল জেলার ৬টি আসনের মধ্যে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া)-এ নৌকার প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগনে ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথের বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত।


ঝালকাঠি-১ আসনে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিপক্ষ নেই বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ওমরের। ঝালকাঠি-২ আসনে প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুকে জয়ের জন্য বেগ পেতে হচ্ছে না।


বরগুনা-২ আসনে জিততে চলেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সুলতানা নাদিরা জলি। পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার এবং পটুয়াখালী-২ আসনে আওয়ামী লীগের আ স ম ফিরোজের জয় নিশ্চিত বলা যায়।


ভোলার ৪টি আসনেই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিপক্ষে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় নিরুত্তাপ ভোটের মাঠ। ভোলা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-২ আসনে আলী আজম মুকুল, ভোলা-৩ আসনে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং ভোলা-৪ আসনে আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। নির্ভার আওয়ামী লীগের জমজমাট প্রচারের বিপরীতে মাঠে তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে না অন্য প্রার্থীদের। তবে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিস্থিতি সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বাস্তবতা হলো পরিপূর্ণ নির্বাচন হলে কেউ আগে থেকে ফলাফল জানবে না, সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকবে। এবারের নির্বাচনে এর কোনোটাই নেই। আওয়ামী লীগ চাইলে সব আসনেই জিততে পারে। তারাই সরকার গঠন করছে।’

শেয়ার করুন