সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। এ ঘটনায় মামলা হয় ১৫৯টি। এর মধ্যে ১০২টির রায় হয়েছে। ১৬টিতে আসামিরা খালাস পেয়েছেন। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ৩৩৯ জনের।
ফাঁসির দণ্ড হয়েছে ১৫ জনের। বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে শতাধিক জঙ্গির করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) এখন সর্বোচ্চ আদালতে ঝুলে আছে। মামলা জটসহ নানা কারণে এগুলোর শুনানি হচ্ছে না। শুধু সিরিজ বোমা হামলা মামলাই নয়, এমন আরও অর্ধশত জঙ্গি হামলা মামলা সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এসব মামলায় অন্তত একশ জঙ্গি আসামি। ভয়ংকর এসব জঙ্গির বেশির ভাগই কাশিমপুর কারাগারসহ বিভিন্ন হাইসিকিউরিটি কারাগারে রয়েছে।
জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, সিরিজ বোমা হামলার কয়েকটি মামলায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব মামলার পেপারবুক তৈরির কাজ শেষ হয়েছে, দ্রুতই নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মামলায় বিচারিক আদালতের রায় হয়েছে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। কিন্তু রায়ের দুই বছর সাত মাস অতিবাহিত হলেও এখনো উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স শুনানি হয়নি। শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে ইতোমধ্যে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করা হয়েছে।
২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে নারকীয় বোমা হামলায় নিহত হন ১০ জন, আহত হন শতাধিক। এ ঘটনার মামলায় প্রায় ১৩ বছর পর রায় দেন বিচারিক আদালত। ২০১৪ সালের ওই রায়ে মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই বছরের ২৬ জুন ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য ঢাকার আদালত থেকে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়।
কারাবন্দি আসামিরাও আপিল করে। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হলেও এখনো শুনানি হয়নি। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় ১০ আসামির ফাঁসির রায় বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি ও ১৪ বছর করে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে একজনকে খালাস দেন হাইকোর্ট।
ঘটনার ২০ বছরেরও বেশি সময় পর নিম্ন আদালতের রায় অনুমোদন এবং আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট রায় দেন। এ মামলার আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী এসএম শাহাজাহান যুগান্তরকে বলেন, উচ্চ আদালতে শুনানি শেষ হলেও এখনো আপিল বিভাগে শুনানি হয়নি। হাইকোর্টে একটি মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য কমপক্ষে তিন-চার বছর লেগে যায়।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে হোসেনি দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই ঘটনার মামলায় প্রায় সাত বছর পর বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়। এতে দুই আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ছয়জনকে খালাস দেন আদালত। এরপর নিয়মানুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আপিল করেছেন। আপিল শুনানির জন্য মামলার রেকর্ড উচ্চ আদালতে এসেছে।
তবে, খালাস পাওয়া ছয়জন বিষয়ে এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড বাড়াতে আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর গাজীপুর আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে শক্তিশালী দুটি বোমার বিস্ফোরণে আটজন নিহত হন। এ ঘটনায় ২০১৩ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক ১০ জেএমবি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ছয় জঙ্গির ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট। দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, কোনো প্রকার লম্বা মুলতবি না দিয়ে মামলাগুলো শুনানি করা যায়। এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।