এক বছর ধরে চলল রুদ্ধশ্বাস নাটক। শেষ দৃশ্যে রিয়াল মাদ্রিদকে ‘না’ বলে পিএসজিতেই থেকে গেলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়ালের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছার পরও শেষ মুহূর্তে হঠাৎ মতবদল। পিএসজির সঙ্গে কেন তিন বছরের নতুন চুক্তি করলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড? সোমবার স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কারণটা ব্যাখ্যা করলেন এমবাপ্পে।
প্রশ্ন : সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও নাকি কথা বলেছেন?
এমবাপ্পে : এটা বিশেষ কিছু। কখনো কল্পনাও করিনি যে, এমন গুরুত্বপূর্ণ কারও সঙ্গে শুধু আমার নতুন চুক্তি নিয়ে কথা হবে। ভালো পরামর্শ পেয়েছি। কিন্তু দিনশেষে এটা আমারই সিদ্ধান্ত। অনেক ভেবেচিন্তে নিজের দেশে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি একজন ফরাসি। একটি নতুন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চেয়েছি। পিএসজিতে নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস, এটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন : নতুন চুক্তিতে বিশ্বকাপের পর পিএসজি ছাড়ার ব্যাপারে কোনো শর্ত আছে কী?
এমবাপ্পে : স্পেনে এ ধরনের শর্ত থাকে, ফ্রান্সে নয়। এই মুহূর্তে আমি শুধু পরের মৌসুম নিয়ে ভাবছি। অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। পিএসজির একজন খেলোয়াড় হিসাবে নিজের ক্লাবকে সম্মান করতে হবে। সত্যি বললে, এক সময় লিভারপুলের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমার মায়ের প্রিয় রং লাল। তিনি লিভারপুলের ভক্ত। মোনাকোতে থাকতে তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। পরেও হালকা কথাবার্তা হয়েছে। তবে তা বেশিদূর এগোয়নি। শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ ও পিএসজির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হতো। সবাই জানে, গত বছর আমি রিয়ালে যেতে চেয়েছিলাম। তখন ভেবেছিলাম এটাই ভালো সিদ্ধান্ত। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ আমি ফ্রি এজেন্ট। একজন ফরাসি হিসাবে নিজের দেশের জন্য আমি গুরুত্বপূর্ণ। আর দেশের স্বার্থ জড়িত থাকলে শুধু ফুটবল নিয়ে ভাবলে চলে না, পুরো জীবন নিয়েই ভাবতে হয়। অবসরের পর পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আমি ফ্রান্সেই থাকব।
... আমি শুধু রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকদের ধন্যবাদই জানাতে পারি। সেখানে না
খেলেও তাদের কাছ থেকে অবিশ্বাস্য ভালোবাসা পেয়েছি।
প্রশ্ন : রিয়াল মাদ্রিদে খেলার স্বপ্ন কী এখনও দেখেন?
এমবাপ্পে : পিএসজির সঙ্গে সবে নতুন চুক্তি করার পর একথা বলা অসম্মানজনক হবে যে, রিয়ালে খেলা আমার স্বপ্ন। ভবিষ্যতের কথা কেউ বলতে পারে না। আমার ভাবনাজুড়ে এখন শুধুই পিএসজি।
প্রশ্ন : শুধু অর্থের জন্য প্যারিসে থেকে যাওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে কী বলবেন?
এমবাপ্পে : আমার জন্য ব্যাপারটা দুঃখজনক শৈশব থেকেই। আমার ধ্যানজ্ঞান ফুটবল। সবসময় ফুটবল, শিরোপা, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ নিয়ে কথা বলেছি, টাকা-পয়সার আলোচনা করিনি। মানুষ যা খুশি তাই বলতে পারে; কিন্তু আমাকে যারা জানেন তারা ব্যাপারটা বুঝবেন। রিয়াল মাদ্রিদ ও পিএসজির সবার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা জানে যে, ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ (রিয়াল সভাপতি) কিংবা নাসের আল খেলাইফির (পিএসজি সভাপতি) সঙ্গে কখনো অর্থ নিয়ে কথা হয়নি আমার। আমার আইনজীবী ও মা আর্থিক বিষয়গুলো দেখেন। আমি ক্রীড়া প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছি। কারণ আমি কথা বলি মাঠে। অর্থ আমার অ্যাকাউন্টে চলে যায়। সেদিকে কখনো কখনো নজর দিলেও এসব নিয়ে আমি ভাবি না। আমার কাজ শিরোপা জেতা, নিজেকে সেরা প্রমাণ করা এবং সুখে থাকা। এখন আমি সুখী।