২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:২৩:৪২ অপরাহ্ন
সংগ্রহ লাইন না করেই প্রস্তুত বর্জ্য শোধনাগার!
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৯-২০২২
সংগ্রহ লাইন না করেই প্রস্তুত বর্জ্য শোধনাগার!

পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ নেটওয়ার্ক না করেই দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করেছে ঢাকা ওয়াসা। ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রামপুরা খালের দূষিত পানি শোধনের মাধ্যমে পয়ঃশোধনাগারটি স্বল্প পরিসরে গত জুনে চালু হয়েছে। পুরোদমে চালু হতে কত সময় লাগবে-তা এখনো অনিশ্চিত। নতুন করে প্রকল্প নিলেও নির্ধারিত এলাকাগুলোয় সংগ্রহ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে ৫ থেকে ৭ বছর লাগবে। কিন্তু এখনো বর্জ্য সংগ্রহ নেটওয়ার্ক তৈরির কাজের অর্থায়নই সংগ্রহ করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা।

ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্জ্য সংগ্রহ নেটওয়ার্ক নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও ২০২৯ সালের জুন থেকে বছরে চীনের ঋণের কিস্তি ১৫৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি ওই ঋণের সুদ হিসেবে বছরে ৫৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প থেকে রাজস্ব আদায় শুরু না হলেও সুদ ও কিস্তিসহ বছরে ২১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, ঢাকা ওয়াসার একশ্রেণির দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের কারণে মুন্সীগঞ্জের পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্পেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। পানি সরবরাহ লাইন না করেই ২০১৯ সালের জুনে

ওই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে ২ হাজার মিলিমিটার প্রশস্তের পাইপলাইন দিয়ে শোধনাগার থেকে ঢাকায় পানি এলেও ৬০০ মিলিমিটার প্রশস্তের পাইপের মাধ্যমে সেটা সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য ওই পানি শোধনাগার প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার হলেও অর্ধেকও উৎপাদন করা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও ওই প্রকল্পের সরবরাহ নেটওয়ার্ক নির্মাণ করতে অর্থের সংস্থানই করতে পারেনি। এ অবস্থায় দাশেরকান্দি প্রকল্পের সংগ্রহ নেটওয়ার্ক করতে কত সময় লাগবে তা সহজে অনুমান করা যায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা শহরের গুলশান, বনানী, বারিধারা, বারিধারা ডিওএইচএস, বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, কুড়িল, সংসদ ভবন এলাকা, শুক্রাবাদ, ফার্মগেট, তেজগাঁও, আফতাবনগর, নিকেতন, সাঁতারকুল, হাতিরঝিল এবং আশপাশের এলাকার পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহের পর পরিশোধন করা হবে। এর ফলে এ পানিতে ক্ষতিকর কোনো জীবাণু থাকবে না। পরিশোধিত এই পানি নিয়ে যাওয়া হবে বালু নদীতে। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঢাকা ওয়াসা দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ৭ বছর সময় নিয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় গত জুনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ওয়াসার একজন প্রকৌশলী যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা ওয়াসা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছে সরকার ও জনগণ। অসম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে গুটিকয়েক প্রভাবশালী লাভবান হলেও বিভিন্ন প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগের সুফল সাধারণ মানুষ পায়নি। এছাড়া প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে বাস্তবতার বিষয়টি সেভাবে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এসব কারণে প্রকল্পের বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত রাজস্বও আয় হচ্ছে না। এজন্য প্রতিবছর দফায় দফায় পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।

ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম সহিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে হাতিরঝিলকে দূষণমুক্ত রাখতে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ নেটওয়ার্ক ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এটা সঠিক নয়। কেননা হাতিরঝিলের সোনারগাঁও পয়েন্ট থেকে একটি নর্দমা সংযোগ রামপুরা ব্রিজের পর্যন্ত দিয়েছে। গুলশান-বনানী এলাকার পয়ঃবর্জ্য সংযোগ পুলিশ প্লাজার পাশ দিয়ে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত গিয়েছে। সেখানে রামপুরা খালে এসব নর্দমার পানি ও পয়ঃবর্জ্য মিশছে। ওই খালের পানি পরিশোধন করা হচ্ছে ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পে। অন্যান্য এলাকাকে এই প্রকল্পের সুবিধা দিতে নতুন নেটওয়ার্ক করা হবে।’

শেয়ার করুন