রাজশাহীতে অর্ধেক জনবল দিয়ে চলছে ডাক বিভাগ। লোকবল ও পরিবহন সংকটের কারণে চিঠি ও জরুরি নথিপত্র সময়মতো গ্রাহকের হাতে পৌঁছায় না। এ জন্য ডাকসেবা সংক্রান্ত খরচ কমানো সত্ত্বেও গ্রাহক ধরতে পারছে না ডাক বিভাগ।
ডাক বিভাগের একটি সূত্র বলছে, ১৯৯০ সালের দিকে রাজশাহী জিপিওতে ১৫ জন পোস্টম্যান ছিল। এখন মাত্র সাতজন দিয়ে সেই কাজ চলছে। এ সাতজনের মধ্যে চারজন স্থায়ী। বাকিরা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করেন। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার জন্য রাজশাহী নগরের নওদাপাড়ায় রয়েছে পোস্টমাস্টার জেনারেলের (পিএমজি) কার্যালয়। এখানে ১২৪টি পদের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৫২ জন দিয়ে চলছে।
ডাক বিভাগ সূত্র জানায়, তারা মূলত তিনটি সেবা দেন। এগুলো হচ্ছে ডাক সংক্রান্ত সেবা, আর্থিক সেবা (মানিঅর্ডার) ও ব্যাংকিং সেবা। ডাক সংক্রান্ত সেবার মধ্যে আছে এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস (ইএমএস)। এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো দেশে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নথিপত্র (ডকুমেন্ট) পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানের কারণে বিলম্ব না হলে নথিপত্র সঠিক সময়ে পৌঁছে যায়।
আর গ্র্যান্টেড এক্সপ্রেস পোস্ট (জিইপি) এর মাধ্যমে রাজশাহী থেকে ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবং চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নথি পাঠানো যায়। কুরিয়ার ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে এসব সেবার ব্যয় কমানো হয়েছে। দেশের মধ্যে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত একটা নথি পাঠাতে আগে খরচ পড়ত ১০ টাকা। এখন সেটা ৮ টাকা করা হয়েছে। আগে জিইপি সার্ভিসে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত ডকুমেন্ট পাঠাতে ১০ টাকা খরচ হয়। আর এখন ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ৩০ টাকা করা হয়েছে। তারপরও লোকজন ডাক বিভাগের কাছে আসছেন না।
ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, মোবাইল ফোনের ব্যবহার কারণে চিঠিপত্র দেওয়া-নেওয়া আগের চেয়ে সংগত কারণে কমে এসেছে। তবে সরকারি নথিপত্র দেওয়া-নেওয়ার জন্য ডাক বিভাগই একমাত্র অবলম্বন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষার খাতা। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে সময়মতো সেই সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, তাদের পদমর্যাদা নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। শুধু ডাক বিভাগেরই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী রয়েছে। এ নিয়ে হাইকোর্টে একটা রিটও হয়েছে। গত চার বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে আছে। এ ছাড়া ডাক বিভাগের উন্নয়নের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। ফলে তাঁরা গ্রাহকদের আধুনিক সেবা দিতে পারছেন না।
ডাক বিভাগ ব্যাংকিং সেবা একটি সম্ভাবনাময় খাত। অথচ ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনলে গ্রাহকদের আগে ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। কারণ, তাঁদের মুনাফা দেওয়া হয় ব্যাংকের মাধ্যমেই। এ ভোগান্তির কারণে এখন ডাকঘর থেকেও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছেন মানুষজন।
নগরের ডাক বিভাগের একজন কর্মচারী বলেন, এক সময় সরকার ডাক বিভাগকে ব্যাংক বানানোর ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ডাক বিভাগকে এখনো ব্যাংকের মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হচ্ছে।
রাজশাহীর পোস্টমাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলাম বলেন, যান্ত্রিকীকরণের জন্য লোকবল কিছু কিছু জায়গায় আর আগের মতো লাগবে না। তবে ‘ডেলিভারি’র (নথি দেওয়া-নেওয়ার) জায়গায় লোকবল অবশ্যই লাগবে। সম্প্রতি তাঁরা লোকবল নিয়োগ দিচ্ছেন নতুন করে।
তিনি বলেন, গাড়ির সমস্যাও রয়েছে। যেমন রাজশাহী থেকে ঢাকায় একটি গাড়ি যায়, একটি আসে। কোনো কারণে একটি বিকল হলেই বেকায়দায় পড়তে হয়। তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন।