২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:০৭:০৩ অপরাহ্ন
চীনের নজর এখন তাইওয়ানে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১১-২০২২
চীনের নজর এখন তাইওয়ানে

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ২০তম কংগ্রেস হয়ে গেল। এবারের সম্মেলনেও ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের নজর এখন তাইওয়ানের দিকে। সেটি বোঝা যায় দেশটির নেতাদের বক্তব্যে। 

পার্টি কংগ্রেসে শি জিনপিং তার সূচনা বক্তব্যে উল্লেখ করেন, চীন শান্তিপূর্ণভাবে তাইওয়ানকে পুনরায় একত্রিত করার চেষ্টা করবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাইওয়ানকে বাগে আনতে না পারলে বিকল্প পন্থা হিসেবে বলপ্রয়োগে পিছুপা হবে না চীন। 

চীনের তাইওয়ানবিষয়ক অফিসের মুখপাত্র মা জিয়াওগুয়াং বলেছেন, আমরা ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের মাতৃভূমিকে একত্রিত করতে আগের চেয়েও আরও আত্মবিশ্বাসী এবং সক্ষম। অতএব আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে চীন অদূর ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সব উপায়ে তাইওয়ানকে একত্রিত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে কংগ্রেসের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত ২৩ অক্টোবর ব্লুমবার্গকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন, চীন বহুদিন স্থিতাবস্থায় থাকার পর এখন তাইওয়ান দখলের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা তাইওয়ানের জনগণের জীবনধারাকে কঠিন করে তুলছে, যাতে তারা পুনরায় চীনের সঙ্গে একত্রিত হয়। 

তাইওয়ানের থিঙ্ক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি রিসার্চের ডিরেক্টর শেন মিং-শিহ বলেছেন, বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে শি জিন পিং তাইওয়ানের ব্যাপারে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন এবং এ কারণে 'কঠোর তাইওয়ান কৌশল' চাপিয়ে দিচ্ছেন। 

চীনকে বিশ্বমঞ্চের কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনার জন্য শির বিশাল উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে তিনি জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করেছেন এবং দেশকে দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে 'সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ' হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২৪ সদস্যের পলিটব্যুরোতে যোগদানের জন্য পদোন্নতি পাওয়া ১৩ জনের মধ্যে বেশিরভাগেরই শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। তবে তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা উন্নত প্রযুক্তি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক শক্তির নীতিগত অগ্রাধিকারের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। 

মা জিংরুই, ঝাং গুওকিং, লি গাঞ্জি, লিউ গুও ঝং এবং ইউয়ান জিয়াজুন সবাই রাষ্ট্রচালিত সামরিক শিল্প কমপ্লেক্সে কাজ করেছেন, যা মহাকাশে দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে চীনের জয়লাভ করার জন্য এগিয়ে রাখবে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো— পলিট ব্যুরো সদস্যের কাছে চীনের গুপ্তচর মাস্টার চেন ওয়েনকিং। যেখানে ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় তৈরির পর এই প্রথম কোনো এমপিএসপ্রধানকে পলিট ব্যুরোতে উন্নীত করা হয়েছে। এ বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে শি জিনপিং এখন কেবল সামাজিক শক্তিকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন না; বরং রাজনৈতিক অভিজাতদের নজরদারি এবং বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করতে এ ব্যবস্থা ব্যবহার করবেন। 

জাতীয় নিরাপত্তার ওপর শি জিনপিং অধিক জোর দিয়েছেন অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার জন্য। এ ছাড়া আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ ও বিদেশে আগ্রাসন চালাতেও তিনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। উভয়ই বিপজ্জনক প্রবণতা এবং সম্ভবত শি জিনপিং তার ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। 

এসব কারণেই ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। পেন্টাগনের বার্ষিক প্রতিরক্ষা কৌশলে বলা হয়েছে যে, চীনের সঙ্গে যে কোনো ধরনের সংঘাত কখনোই কাম্য নয়। 

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন স্বীকার করেছেন যে, ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তিতে বলীয়ান চীন তাদের একমাত্র প্রতিযোগী।  আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়টি নিয়ে সবসময় সতর্ক থেকে কাজ করা উচিত।

এদিকে তাইওয়ানের আকাশসীমায় এখন প্রায়ই চীনের সামরিক মহড়া লক্ষ্য করা যায়। গত রোববার অন্তত ৪৪টি যুদ্ধবিমান, চারটি যুদ্ধজাহাজ এবং দুটি ড্রোন তাইওয়ানের চারপাশে ঘিরে মহড়া দিয়েছে বলে জানিয়েছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। 

তবে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চু কুয়ো-চেঙ জানিয়েছেন, তাইওয়ান চীনের আক্রমণ ঠেকিয়ে তাদের ভূখণ্ড রক্ষায় পুরোপুরি প্রস্তুত। 

তিনি বলেছিলেন, তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী যে কোনো চীনা আক্রমণ ঠেকাতে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকবে যেমনটি করার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। তারা সময় এগিয়ে আনুক বা পিছিয়ে দিক আমরা সবসময় প্রস্তুত।

শেয়ার করুন