বুয়েটের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় গ্রেফতার তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আতাউল্লাহ জামিন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বুশরাকে এদিন আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিমের পরিদর্শক মজিবুর রহমান আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
অন্যদিকে বুশরার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বুশরার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর ওই আদেশ দেন।
আদালতে বুশরার পক্ষে জামিন শুনানি করেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা মোখলেসুর রহমান বাদল, একেএম হাবিবুর রহমান চুন্নুসহ কয়েকজন আইনজীবী।
শুনানিতে আইনজীবী বাদল বলেন, ‘রিমান্ডের আগে ও রিমান্ডে নিয়ে বুশরাকে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে ফারদিনের সঙ্গে বুশরার পরিচয়। এর বাইরে তাদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল না, প্রেমের সম্পর্ক তো নয়ই। যেসব সিসিটিভি ভিডিও এসেছে, সেখানে তো হত্যা বা জোর করে ধরে নেওয়ার কোনো বিষয় পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমের খবর থেকেও বুশরার সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জামিন জরুরি।’
২৪ বছর বয়সী ফারদিন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে ডেমরার কোনাপাড়ায় থাকতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার বান্ধবী বুশরা পড়েন ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে। রামপুরার বনশ্রীতে তার বাসা। বছর পাঁচেক আগে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফারদিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় বলে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানার ভাষ্য।
৪ নভেম্বর ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক জানান, ওই তরুণকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে।
ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল রামপুরা এলাকায় বুশরার সঙ্গে। সে কারণে রামপুরা থানাতেই একটি জিডি করেছিলেন ফারদিনের বাবা। ছেলের লাশ পাওয়ার দুদিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় বুশরাকে একমাত্র আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বুশরাকে তারা ওই মামলায় গ্রেফতার করেছেন। পরে ওই তরুণীকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৪ নভেম্বর বিকাল ৩টায় বুয়েটে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন ফারদিন। পরদিন ৫ নভেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু পরে জানা যায়, ফারদিন পরীক্ষা দেননি। শিক্ষক ও বন্ধুরা বারবার তার মোবাইলে ফোন করে বন্ধ পান। ফারদিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকার খবর পেয়ে ৫ নভেম্বর বিকাল থেকে পরিবারের সদস্যরাও ফারদিনকে ফোন করে মোবাইল বন্ধ পান। তখন তারা রামপুরা থানায় জিডি করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, সাধারণ ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে রামপুরা থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলামের জেরায় বুশরা জানান, ৪ নভেম্বর ফারদিন বাসা থেকে বের হওয়ার পর ওইদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার (বুশরা) সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। প্রথমে তারা ধানমন্ডি সিটি কলেজ এলাকায় মিলিত হয়েছেন। সেখান থেকে তারা নীলক্ষেত ও ধানমন্ডি এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন।
এজাহারে বলা হয়, ফারদিন ও বুশরা ওই দিন বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে সাত মসজিদ রোডে ‘ইয়াম চা ডিস্ট্রিক্ট’ রেস্তোরাঁয় খাবার খেয়েছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরেছেন। এরপর তারা রাত ১০টার দিকে রিকশায় রামপুরা টেলিভিশন ভবন এলাকায় আসেন। এর ৩ দিন পর ফারদিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনে বুশরার ইন্ধন রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ফারদিনের সর্বশেষ অবস্থান ছিল গাজীপুর। তার লাশ কিভাবে শীতলক্ষ্যায় গেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঘটনার দিন ফারদিনকে বিভিন্ন লোকেশনে পাওয়া গেছে। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।