২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৩৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
বিএনপি নির্বাচন নিয়ে নোংরা খেলা খেলে: প্রধানমন্ত্রী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১২-২০২২
বিএনপি নির্বাচন নিয়ে নোংরা খেলা খেলে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে নোংরা খেলা খেলে। তারা ক্ষমতায় গেলে মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে এবং দেশকে পিছিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলাটা বিএনপির চরিত্র। কারণ একটাই ওরা গণমানুষের দল নয়, ওরা মানুষকে পরোয়া করে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা ওদের কাছে ভোগের বস্তু, লুটের সুযোগ, লুটের মাল। আর বাংলাদেশের মানুষ তো তাদের কাছে কিছুই না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কথা হয়নি। জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে কেউ তো সে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। ৩০০ সিটের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টা সিট পেয়েছে। জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ২৭টা সিট। জাতীয় পার্টি আর কয়েকটা সিট পেলে খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হতে পারতেন না। 

শেখ হাসিনা বলেন, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, তখন দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগই দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারে। বিএনপিসহ যারাই আগে ক্ষমতায় ছিল, দেশের মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি। ২১ বছর এ দেশের মানুষ নির্যাতিত, শোষিত ও বঞ্চিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকরা ভুলে গেছেন ২০০১ সালে দক্ষিণাঞ্চলে কোনো সাংবাদিক ঢুকতেই পারতেন না। সে অঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়েছিল। গৌরনদী থেকে ২৫ হাজার মানুষ এসে কোটালিপাড়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ৭১’ এর মতো।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করলে দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো প্রহসনমূলক সে নির্বাচন বর্জন করেছিল।

তিনি বলেন, জনগণ শুধু নির্বাচন বর্জনই করেনি, এমন গণঅভ্যুত্থান করেছিল যে, খালেদা জিয়া মাত্র দেড় মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।

২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি দেশের অসংখ্য মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, সে কারণে দেশের মানুষ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া তার গুলশানের অফিসে বসে অবরোধ ডাকল আর তার আন্দোলন মানে মানুষ পুড়িয়ে মারা।

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জনগণের নয়, বিএনপির উন্নয়ন হয়। হাওয়া ভবন নির্মাণ করে খাওয়া শুরু করে।

ব্যাংকে টাকা নেই বলে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে বাসায় এনে টাকা রেখেছে। এতে চোরের সুযোগ করে দিয়েছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে এরা চোরের এজেন্ট। তাই গুজবে কান দিবেন না, দেশের কল্যাণে যে কাজ করে যাচ্ছি সেজন্য সমর্থন চাই। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতার সঙ্গে একাত্তরের ঘটনার তিনি কোনো পার্থক্য দেখতে পান না। কেননা মায়ের সামনে মেয়েকে, আর মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করেছে। ’৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত আর ২০০১ থেকে ২০০৮- এই ২৯ বছর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, তাদের ভাগ্যোন্নয়ন হয় তখনই যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

তিনি বলেন, তারা অনেক অত্যাচার করেছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবার অস্ত্রের ঝনঝনানি। এদের দুঃশাসন ছিল চরম পর্যায়ে। আমরা আওয়ামী লীগ অফিসে পর্যন্ত যেতে পারতাম না। কোনো রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব মহিলা লীগ করার পর এই সব বাধা অতিক্রম করে আমার এই মেয়েরাই রাস্তায় নেমে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমি আমার যুব মহিলা লীগের প্রতিটি কর্মীকে অভিনন্দন জানাই, কেননা ওই সময়ে এই অত্যাচারের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই মেয়েদেরকে ওরা ছাড়েনি, একদিকে পুলিশ বাহিনী আর একদিকে ছাত্রদল ও বিএনপির গুণ্ডাবাহিনী অকথ্য নির্যাতন করেছে আমাদের এই মেয়েদের ওপর, যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেক মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়েছে সে অন্তঃসত্ত্বাই হোক অথবা সদ্য প্রসূতিই হোক কেউই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। রাস্তায় ফেলে কাপড় ছিঁড়ে চুল টেনে মেরে তারা যে অত্যাচার করেছে তার কিছুই আমরা তাদের ওপর করিনি। আমরা প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা দেশের উন্নয়নের দিকে মনযোগ দিয়েছি।

‘কাজেই বিএনপি মানেই হচ্ছে অত্যাচার-নির্যাতন আর দেশে দুঃশাসন, লুটপাট, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই এটাই। নারী নীতিমালা তো বিসর্জন দিলোই নারীর অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিল। এমনকি এই শামসুন্নাহার হলে ছাত্রদল এবং পুলিশ গিয়ে মেয়েদের ওপর অত্যাচার করেছে। ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মারামারিতে বুয়েটে সনি নামের মেয়েটা মারা গেল। তাদের হাতে যেভাবে আমাদের নেতাকর্মী বা সাধারণ মানুষ নির্যাতিত, এরপর শোষণ নির্যাতন এবং মানি লন্ডারিং এছাড়া দেশকে তারা কি দিতে পেরেছে, কিছুই দিতে পারেনি, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে কোনো মানুষ কর্মহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। দেশের মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনা পয়সায় আমরা ভ্যাকসিন দিয়েছি। কেউ গৃহহীন থাকবে না।  ৩৫ লাখ মানুষকে ভূমিসহ ঘর দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিক খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, সেটি চালু করে ৩০ প্রকার ওষুধ ফ্রি দিচ্ছি। গ্রামের মানুষ নিজে হেঁটে এসে স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারে। নারীর ক্ষমতায়নে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। নারীদের সুরক্ষিত রাখতে একাধিক আইন আমরা করে দিয়েছি। ৯৬ সালের আগে মেয়েদের এত জাগরণ ছিল না। আজকে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জয়গান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নারী জাগরণ ঘটিয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তৃণমূল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা হবে, সেভাবে কাজ চলছে। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ অঞ্চল এক সময় অবহেলিত ছিল, এখন আর নেই। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের কেউ আটকে রাখতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল সম্মেলন সঞ্চালনা করেন এবং সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা এবং বেলুন উড়িয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন।

কাউন্সিলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ সব শহিদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

২০০২ সালের ৬ জুলাই গঠিত হয় যুব মহিলা লীগ এবং নাজমা আক্তার ও অপু উকিল নেতৃত্বে আসেন। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ যুব মহিলা লীগের সর্বশেষ সম্মেলনেও পুনরায় নাজমা আক্তার ও অপু উকিলই নেতৃত্বে আসেন।

শেয়ার করুন